এবার চোখ রাঙ্গাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘নাকরি’

সম্প্রতি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি বিধ্বস্ত এলাকাগুলো। এর মধ্যেই ফের নতুন আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের আগমনবার্তা দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।

প্রতীকী ছবি

নতুন ঘূর্ণিঝড়টির নাম নাকরি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ‘ট্রপিক্যাল সাইক্লোন’ এর তালিকায় এর নাম না থাকলেও ইতোমধ্যে এটি চিন সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ‘মাটমো’ নামের যে ঘূর্ণাবর্ত থেকে বুলবুলের সৃষ্টি হয়েছিল সেটির উৎসস্থলও ছিল দক্ষিণ চীন সাগর। ঠিক একই ধরনের ঘূর্ণাবর্ত ‘নাকরি’ সৃষ্টি হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগরে। যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করে ভিয়েতনামের দিকে এগোচ্ছে। এর প্রভাবে দেশটির উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।

তবে বৃষ্টিপাতের ফলে ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি ক্ষয় হবে এবং ফের ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হবে। এরপর সেটি দক্ষিণ থাইল্যান্ডের স্থলভাগ অতিক্রম করে মিয়ানমারের দক্ষিণভাগে এসে পৌঁছাবে। তখনও ঘূর্ণাবর্তটির শক্তি কম থাকায় ভারী বৃষ্টিপাত ঝরিয়েই এর শক্তি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মিয়ানমারের দক্ষিণভাগে শক্তি ক্ষয় করার পর ঘূর্ণাবর্তটি ফের একবার বঙ্গোপসাগরে এসে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। এমনটা হলে আগামী ১৪ নভেম্বর নাগাদ ঘূর্ণাবর্তটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আর ঘূর্ণিঝড় হিসেবে যদি 'নাকরি' এগোতে থাকে তাহলে ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িষ্যায় ফের বিপদ ঘনিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ এটি দেশটির উপকূলে আঘাত হানতে পারে তা জানা যায়নি। বাংলাদেশেও আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, শনিবার গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এতে দেশ দুটিতে বেশ কয়েকজনের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

শেষ খবর পর্যন্ত বুলবুলের তাণ্ডবেবাংলাদেশের খুলনায় ২ জন, বাগেরহাটে ২ জন, পটুয়াখালী ১ জন, পিরোজপুরে ১ জন, মাদারীপুরে ১ জন, ভোলায় ১ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, শরীয়তপুরে ১ জন, বরিশালে ১ জন, গোপালগঞ্জে ১ জন এবং বরগুনায় ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, উপড়ে গেছে বিপুলসংখ্যক গাছ। কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং ভেসে গেছে চিংড়ির ঘের। সেইসঙ্গে আমনসহ বিভিন্ন ফল-ফসল এবং শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে বুলবুলের তাণ্ডবে ভারতের দক্ষিণবঙ্গে ৬ জন মারা গেছেন। এতে প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজারের মতো বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ঝড়ের দাপটে ক্ষতির মুখে পড়েছে ৯৫০টির বেশি মোবাইল টাওয়ার।