শেখ হাসিনার কলকাতা সফর, মোদি সরকারের আচরণে অবাক ভারতীয়রাই
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছরের অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ভারতের একজন প্রতিমন্ত্রী। আর সাম্প্রতিক কলকাতা সফরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতের কোনো শীর্ষ আমলা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে দেশটিরই অনেকে অবাক হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান যখন নয়াদিল্লিতে নামে, তখন তাকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন প্রথমবারের মতো নির্বাচিত ভারতের সংসদ সদস্য তথা নারী ও শিশুকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। হাসিনার সফরসঙ্গী নেতারা ঘরোয়াভাবে জানিয়েছিলেন, এটা ‘যেচে অপমান নেওয়া’। প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বা কোনও সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন— এটাই ছিল প্রত্যাশা। প্রথম বার জিতে আসা কোনও প্রতিমন্ত্রী নন।
শনিবার প্রকাশিত আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল (শুক্রবার) প্রধানমন্ত্রীর (মোদি) আমন্ত্রণে কলকাতায় এলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা। কিন্তু তাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষ আমলাকেও পাঠানো হয়নি। যা কি না বাঁধাধরা কূটনৈতিক প্রথা এবং সৌজন্যের বিরোধী। কেন এমন উদাসীনতা প্রদর্শন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে মুখ খুলতে চাইছে না নয়াদিল্লি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই কারণ। একদিকে তারা (মোদি-অমিত শাহ) যখন দেশজুড়ে এনআরসি করে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’দের দেশছাড়া করার কথা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত এনআরসি-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতেই চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা।
কিন্তু সিনিয়র কোনও আমলাকেও কেন কলকাতায় পাঠায়নি মোদি সরকার, তা নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা। সব মিলিয়ে দিল্লির এই আচরণে প্রতিবেশী বলয়ে ভারতের অস্বস্তি যে আরও বেড়ে গেল, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কূটনীতিকদের।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ মোদি। পাকিস্তান সীমান্তের ওপার থেকে আসা জঙ্গিপনায় ভারত যখন চাপে, সেই সময় হাসিনা সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস উৎখাত করবে। সে কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবেশীদের মধ্যে একমাত্র ঢাকাকেই বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ে পাশে পেয়েছে দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের অনুরোধে বাংলাদেশ তাদের ভিতর দিয়ে আসাম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকা। এমন ‘পরম মিত্রের’ ভারত সফরে দিল্লির এই উদাসীনতা কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রা কাড়তে না চাইলেও দিল্লির এই উদাসীনতা যে ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার পক্ষে চাপের, সে কথা ঘরোয়াভাবে জানানো হচ্ছে। এনআরসি নিয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুমকির ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়ছে। দিল্লির এই আচরণ তাকে উস্কে দিতে পারে।
চীনপন্থী গোটাবায়া রাজাপাকশে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পর সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চীনের কাছে ঋণের ফাঁদে কার্যত বন্দি কলম্বো তাদের হাম্বানটোটা বন্দরটি তুলে দিয়েছে বেইজিংয়ের হাতে। ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারতবিরোধী ঘাঁটি তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বেইজিং। এবার গোটাবায়ার জমানায় সেই কাজ মসৃণ হওয়ার সম্ভাবনা।
ডোকলাম পরবর্তী ভুটান এবং চীনপন্থী সরকার হওয়ার পর নেপালও খোলাখুলিভাবেই বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় পর্যটকদের জন্য মোটা পর্যটন শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান।
অন্যদিকে, চীনের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ায় নয়াদিল্লির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে নেপালের। ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত যৌথ সেনা মহড়া থেকে কাঠমান্ডুর সরে দাঁড়ানো, চীনের সঙ্গে পণ্য পরিবহন চুক্তি করা, বেইজিংয়ের মহাযোগাযোগ প্রকল্প ওবর-এ নিজেদের শামিল করার মতো বিষয়গুলি থেকে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সফরকারী রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দিল্লির এমন শীতল ব্যবহারে অবাক অনেকেই।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.