ফিরে দেখা ২০১৯: লিভারপুলের ফেরা আর মেসির ঝলক

মহাকালের গর্ভে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায় আরো একটি বছর। সমাজ সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের মতো ক্রীড়াঙ্গনও রেখে যাচ্ছে নানান ঘটনা। বছরের প্রান্তভাগে এসবকিছুর রোমন্থনে পেছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ক্লাব ফুটবলে আলোচিত ঘটনাপ্রবাহ।

রিয়ালের পতন লিভারপুলের দ্বিমুকুট

টানা তিনবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এ বছর পতন হয়েছে রিয়াল সম্রাজ্যের। ইউরোপের সর্বোচ্চ মঞ্চে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে লিভারপুল। দীর্ঘ ১৪ বছর অল রেডরা পেয়েছে ষষ্ঠ রুপালি ট্রফির স্বাদ। অল ইংল্যান্ড ফাইনালে টটেনহাম হটস্পারকে হারায় তারা।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে শাপমোচন করেছেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। পেশাদার কোচিং ক্যারিয়ারের সপ্তম ফাইনালে এসে জার্মান কোচ পেলেন শিরোপার স্বাদ। বছর না ঘুরতেই তার দুর্দান্ত নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো লিভারপুল জিতেছে ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি। এর আগে উয়েফা সুপার কাপের শিরোপাও জিতেছে তারা।

উয়েফার বর্ষসেরা ফন ডাইক

লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালাদোকে হারিয়ে গত বছর উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন লুকা মডরিচ। এ বছর আরো একজন নতুন রাজাকে পেয়েছে উয়েফা। এবার উয়েফার সেরা নির্বাচিত হন লিভারপুলের ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক। এ বছর অল রেডদের দ্বিমুকুট জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল এই ফন ডাইকেরই।

উত্তপ্ত এল ক্লাসিকো

বছরের শেষ দিকে এল ক্লাসিকো মাঠে গড়ানো নিয়ে নাটক কম হয়নি। কাতালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল রিয়াল-বার্সা দ্বৈরথে। শেষ অবধি এল ক্লাসিকো পেছানো হয়। মাঠের লড়াইটা ঠিকঠাক শেষ হলেও ন্যু ক্যাম্পের বাইরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত হয় পুলিশের। আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।

লিওনেল মেসির রাজত্বে ফেরা

উয়েফার বর্ষসেরা হতে পারেননি। কিন্তু অন্য দুই ক্যাটাগরিতে সিংহাসনে ফিরেছেন মেসি। জিতেছেন ফিফার দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ড। এই মাসের শুরুর দিকে ব্যালন ডি’অরের ষষ্ঠ মুকুট পেয়েছেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তাতেই হলো ইতিহাস।

চিরশত্রু রোনালদোকে ছাড়িয়ে প্রথম ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ ছয়টি ব্যালন ডি’অর জিতলেন তিনি। ব্যক্তিগত এই সাফল্যের নেপথ্য কারণ বছরজুড়ে গোলের বন্যা বইয়ে দেওয়া। টানা ষষ্ঠ ও সর্বোপরি নয়বারের মতো মেসি এক ক্যালেন্ডারে গোলের হাফসেঞ্চুরি করেছেন এ বছরই।

ফ্ল্যামেঙ্গোর কোপা লিবার্তাদোরেস জয়

দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ আসর কোপা লিবার্তাদোরেস। এ বছর আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেটকে ২-১ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলিয়ান জায়ান্ট ফ্ল্যামেঙ্গো উদ্ধার করেছে হারানো রাজত্ব। এর আগে ১৯৮১ সালে শেষবার এই শিরোপা জিতেছিল ফ্ল্যামেঙ্গো। কিন্তু ফাইনাল নয়, এই বছর আলোচিত ছিল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল।

যেখানে আর্জেন্টাইন দুই ক্লাব রিভার প্লেট ও বোকা জুনিয়র্সের লড়াই রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। নাটকীয় দুই লেগ শেষে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে রিভার প্লেট। কিন্তু শিরোপা ধরে রাখার শেষ লড়াইয়ে তারা হেরে যায় ফ্ল্যামেঙ্গোর কাছে। কোপা দিবার্তাদোরেস জয়ের সুবাদে ক্লাব বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছিল ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি। কিন্তু ফাইনালে লিভারপুলের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়  ফ্ল্যামেঙ্গোর।

কোচ ছাঁটাইয়ের হিড়িক

এ বছর রাহুর দশা লেগেছে জায়ান্ট দলগুলোর কোচদের ওপর। বছরজুড়ে ছিল কোচ ছাঁটাইয়ের হিড়িক। যার শুরুটা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ কোচ হুলেন লোপেতেগুইকে দিয়ে। শেষ হয়েছে নাপোলির কোচ কার্লো আনচেলত্তির বিদায়ে। ইতালিয়ান কোচ অবশ্য ইতোমধ্যে ইংলিশ ফুটবলে ফিরে এসেছেন এভারটনের ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে। আনচেলত্তি দশদিনের মাথায় চাকরি পেয়েছেন।

বিখ্যাত আরেক কোচ হোসে মরিনহোর চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হলো এক বছর। স্পেশাল ওয়ান ফিরেছেন লন্ডনেই; বছরের শেষ ভাগে। তবে পুরনো কোনো ক্লাব নয়, এবার তিনি টটেনহাম হটস্পারের কোচ নিযুক্ত হয়েছেন। আলোচনায় ছিল আর্সেনাল কোচ উনাই এমেরিকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও। ঝড় তুলেছিল বায়ার্নের ৫ গোল হজম করে কোচ নিকো কোভাকের বিদায় পর্বটাও।

নিজ ভুবনে জিদানের প্রত্যাবর্তন

গত বছরের মাঝামাঝিতে অভিমানেই রিয়াল মাদ্রিদের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জিনেদিন জিদান। এ বছর আরো ‘শক্তিশালী’ হয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ফিরে এসেছেন জিজু। ফরাসি কোচ ফিরেছেন প্রিয় টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ডাগ আউটে। জিদানের এই ফেরাটা বছরজুড়ে আলোচনার তুঙ্গে ছিল।

নেইমার দলবদল নাটক

গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে ঠিকানা বদল না হলেও মৌসুমজুড়ে তুমুল আলোচিত ছিলেন নেইমার। বার্সেলোনায় ফেরার আগ্রহ ছিল তার। কাতালানরাও তাকে ফেরাতে মরিয়া ছিল। নেইমারকে কেনার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসও। কিন্তু পিএসজিকে রাজি করতে পারেনি কেউ। নেইমারও তাই থেকে গেলেন প্যারিসে। কিন্তু তাকে সহজে গ্রহণ করেননি পিএসজির সমর্থকরা।

ইব্রার মূর্তি ও হামলা

ফুটবলের ফেরিওয়ালা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। বিদায়লগ্নে দাঁড়িয়ে থাকা বছরের পুরোটা সময় পাদ প্রদীপে ছিলেন সুইডিস কিংবদন্তি। কখনো দুর্দান্ত গোল করে কিংবা কখনো ক্লাব পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে প্রায়ই শিরোনামে ছিলেন তিনি। বছরের শেষ দিকে ইব্রা আলোচনায় ছিলেন অন্য কারণে।

শৈশবের ক্লাব মালমো শ্রদ্ধা জানিয়ে তার একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করে। সেই মূর্তির ওপরই কয়েকদফা হামলা করেছেন মালমোর উগ্র সমর্থকরা। নেপথ্য কারণ, মালমোর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের মালিকার অংশ কিনেছেন ইব্রা!