সরকারে শুরু, সম্মেলনে শেষ: ‘বড় অর্জন’ নতুন নেতৃত্ব

গেলো বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর রাজনীতির খালি মাঠে ঘর সামলাতে পার করেছে পুরোটা বছর। গত ২০-২১ ডিসেম্বর ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০১৯ সাল।

দলটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক মাঠে বিএনপি লাগাতার কোনো কর্মসূচি নিয়ে সোচ্চার না হওয়ায় বছরটি বেশ আয়েশেই কেটেছে আওয়ামী লীগের। রাজপথে সক্রিয় থাকতে হয়নি বলে দল সামলাতেই ব্যস্ত ছিলো দলটি। বছরান্তে এসে ‘শুদ্ধি অভিযান’ দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিলেও সরকারি দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের গ্রেপ্তার এবং সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাদের বাদ দেয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর কমিটিতে নতুন নেতৃত্বকে ‘বড় অর্জন’ হিসেবে দেখছেন তারা।

এছাড়া মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের উপজেলা এবং পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অধিকাংশে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়কেও নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষণ হিসেবে দেখছে সরকারি দলটি। জুন-আগস্টে ডেঙ্গু মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ থাকলেও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচন দেয়া ও তাতে জিএস, এজিএসসহ ২৩টি পদ নিজেদের জয়লাভকে সফলতা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।

দলটির নেতারা বলছেন, ২০১৯ সালের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘বিতর্ক’ থাকলেও ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ক্যাসিনো ও দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিয়েছে। এতে জড়িত ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে যুবলীগসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের সম্মেলন সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে। এসব সংগঠন থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বে সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আসছে নতুন বছর ২০২০ সালে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে ঘুড়ে দাঁড়াবে আওয়ামী লীগ।

নেতারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যে আরেক আওয়ামী লীগ, সরকারের মধ্যে আরেক সরকার তৈরি হয়েছে। শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে এবারের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। একাকার হয়ে যাওয়া দল ও সরকার আলাদা করার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে। এতে দলের নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। ফলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি গণমুখী করতে নেয়া এসব উদ্যোগের ইতিবাচক সাড়া মিলবে আগামী বছরে।

২০১৯ সালের শেষে এসে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার হিসাব জানতে চাইলে নেতারা বলেন, মোটা দাগে বললে- বিতর্কিত ও অপকর্মে জড়িত নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, সংগঠনগুলোর সম্মেলন সময় মতো করতে না পারা, দলীয় নেতাদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ করতে না পারা, বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীদের আইনের আওতায় আনতে না পারা।

এছাড়া দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে না পারা, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারা এবং গুজব সৃষ্টি করে দেশ অস্থিতিশীল হওয়া রোধ করতে না পারাও আওয়মী লীগ সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে এসব নেতিবাচক দিক আগামী বছরে দূর করতে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে বলে আশা করছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট এমন লক্ষ্য নিয়েই সরকারে থাকা মন্ত্রীদের আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বাদ দেয়া, সহযোগী সংগঠন থেকে বিতর্কিত প্রভাবশালী নেতাদের অব্যহতি দেয়া, দল ও সহযোগী সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আনা, মন্ত্রীসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যদের দলীয় পদে না রাখা, অনিয়মে জড়িত দলীয় নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করাসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।