দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনো তেমন কোনো সফলতা অর্জন করতে পারেনি। বরং সদ্য সমাপ্ত ২০১৯ সালে চোখ কপালে তুলে দেয়ার মতো কিছু অস্বাভাবিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটে গেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশ করা দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। আর বিশ্ব তালিকায় দেশের অবস্থান ছিল ১৪৯তম এবং নিচ থেকে ১৩তম।

ruppur power plant

বছরজুড়ে দেশে আলোচনায় ছিল রূপপুরের বালিশ কাণ্ড, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালের পর্দা কেলেঙ্কারি, দুদকের সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ও সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের দুর্নীতি মামলা এবং কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিকের দুর্নীতির মতো কিছু ঘটনা।

বালিশ কাণ্ড: পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অধীনে গ্রিন সিটি আবাসিক প্রকল্পের জন্য আসবাবপত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ে অস্বাভাবিক দুর্নীতির ঘটনা দেশব্যাপী পরিচিতি পায় রূপপুরের বালিশ কাণ্ড হিসেবে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১২ ডিসেম্বর চার মামলা দায়ের এবং এতে আসামি করা ১৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে।

ruppur corruption balish

গ্রেপ্তার ১৩ জন হলেন- পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল কবীর, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল, উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, এস্টিমেটর ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক, সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সাঈদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রওশন আলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাহাজ্জুদ হোসেন এবং মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আসিফ হোসেন ও সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শাহাদত হোসেন।

এর আগে আবাসিক প্রকল্পের কেনাকাটায় দুর্নীতির এ ঘটনা একটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার তিন দিন পর সরকার ১৯ মে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রিন সিটির চার ভবনে আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী সরবরাহে তিন কোম্পানির সাথে ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার চুক্তি হয়। কিন্তু এসব সামগ্রীর আসল মূল্য ছিল ৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এখানে দেখা যায় যে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা আর বালিশটি নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে ৭৬০ টাকা খরচ উল্লেখ করা হয়েছে। একটি বৈদ্যুতিক চুলা কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৭৪৭ টাকা আর তা নিচ থেকে ফ্ল্যাটে তুলতে লেগেছে ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। একটি ইলেকট্রিক কেটলি কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৩১৩ টাকায় এবং তা ফ্ল্যাটে নিতে লেগেছে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা। একইভাবে একটি কক্ষ পরিষ্কারের মেশিন কিনতে ১২ হাজার ১৮ টাকা এবং ফ্ল্যাটে ওঠাতে ৬ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

fmc curtain

পর্দা কেলেঙ্কারি: ২০১৯ সালে আরেক বড় দুর্নীতির ঘটনায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালে পর্দা ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় আত্মসাৎ করা হয় ১০ কোটি টাকা। এতে একটি পর্দার দাম ধরা হয় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা, অক্সিজেন উৎপাদন প্ল্যান্টের দাম পড়ে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্টের মূল্য দাঁড়ায় ৮৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, একটি বাইস্পেক্ট্রাল ইনডেক্স (বিআইএস) মনিটরিং প্ল্যান্টের দাম পড়ে ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, রক্তচাপ মাপার তিনটি ডিজিটাল যন্ত্রের দাম ধরা হয় ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং একটি হেড কার্ডিয়াক স্টেথিস্কোপ কেনা হয় ১ লাখ ১২ হাজার টাকায়।

ফমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) কেনাকাটায় এ অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে গত ২০ আগস্ট নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। এ জন্য ৬ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল।

দুদক ২৬ নভেম্বর এ ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন করে। পরে ২৮ নভেম্বর সংস্থার সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদি হয়ে মামলা করেন।

অভিযুক্তরা হলেন- পর্দা সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন, মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সি ফররুখ আহমেদ, জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন, ফমেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (দন্ত বিভাগ) ডা. গণপতি বিশ্বাস শুভ, ফমেক হাসপাতালের সাবেক জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. মিনাক্ষী চাকমা ও ফমেক হাসপাতালের সাবেক প্যাথোলজিস্ট ডা. এএইচএম নুরুল ইসলাম।

dig mijan basir

বাছির ও মিজানের কাহিনী: দুদকের সাময়িক বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ও পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের ৪০ লাখ টাকার বেশি ঘুষ কেলেঙ্কারি দেশের আলোচিত আরেক ঘটনা। দুদক এ ঘটনায় ২৩ জুলাই মামলা করে।

দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মোহাম্মদ ফানাফিল্যা সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয় দুদক।

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে তাকে দায়মুক্তি দিতে দুদক পরিচালক বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সমঝোতা করেন।

এর আগে ২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে জোর করে বিয়ে করার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরসহ দুদকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে বিতর্কিত ডিআইজি মিজানকে ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে ২৫ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

dig partho

ডিআইজি প্রিজনের দুর্নীতি: সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিকের দুর্নীতিও গত বছর গণমাধ্যমে বড় জায়গা করে নেয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) থাকার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পার্থকে ২৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ। পরে বিকালে তার রাজধানীর ভূতের গলি এলাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করে দুদক।

পরে ২৯ জুলাই অবৈধভাবে ঘুষ গ্রহণ ও মানিলন্ডারিং আইনে পার্থর বিরুদ্ধে মামলা এবং এতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে সামিয়ক বরখাস্ত করে। বর্তমানে তিনি দুদকের মামলায় কারাগারে আছেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.