সম্পদে এগিয়ে তাবিথ, ঋণে আতিকুল

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষা ও সম্পদের হিসাবে এগিয়ে আছেন বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। অন্যদিকে, দুই জায়গায়ই পিছিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডিএনসিসির সদ্য পদত্যাগ করা মেয়র আতিকুল ইসলাম। পাশাপাশি তার ঋণের পরিমাণও তাবিথের থেকে বেশি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডিএনসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া মেয়র প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে আতিকুল ও তাবিথের সম্পদ ও শিক্ষার এসব তথ্য পাওয়া যায়।

হলফনামা সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মনোনীত ডিএনসিসির মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৯৬১ সালের ১ জুলাই মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও মাজেদা আহমেদ দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসাবে বর্তমানে তার বয়স ৫৮ বছর। তিনি তৈরি পোশাক খাতের একজন ব্যবসায়ী এবং বর্তমানে ১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

বিকম পাস ডিএনসিসির সদ্য সাবেক এ মেয়রের বার্ষিক আয় ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। আতিকুলের স্থাবর সম্পদের মূল্যমান প্রায় ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে তিনি হলফনামায় কৃষি খাত, মৎস্য চাষ, ব্যবসা, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া এবং ব্যাংক সুদের কথা উল্লেখ করেছেন।

হলফনামা থেকে জানা যায়, আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে আতিকুলের ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। পাশাপাশি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে আইএফঅঅইসি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণ রয়েছে ৫৯১ কোটি ৬ লাখ টাকা।

ডিএনসিসির মেয়র পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগের এ নেতার নিজের নামে বাড়ি থাকলেও নেই কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি। এ ছাড়া তার নামে থানায় কোনো ধরনের মামলা নেই। এর আগের ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচনের সময়ও আতিকুল হলফনামায় প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে, বিএনপির মনোনীত ডিএনসিসি মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বয়স ৪১ বছর। তিনি ১৯৭৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং মা নাসরিন আউয়াল। এমএসসি পাস তাবিথ একজন সফল ব্যবসায়ী। বর্তমানে তিনি ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

বিএনপির মনোনীত এ প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৪ কোটি ১২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৬০ লাখ ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ৪ দশমিক ২৪ একর কৃষি জমি, ১৬ দশমিক ৪৮ একর অকৃষি জমি এবং দশমিক ৫৬ একর অন্যান্য জমি। দুটি অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে তার। যার একটির আয়তন ১ হাজার ৪৩ বর্গফুট এবং আরেকটির আয়তন ৯২৪ বর্গফুট।

তাবিথ আউয়ালের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩০২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। তবে তার নামে থানায় কোনো মামলা নেই।

এর বাইরে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত প্রার্থী ছিলেন জি এম কামরুল ইসলাম। কিন্তু তার মনোনয়ন পত্রটি ইতোমধ্যে বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি ঢাকার ভোটার না হয়েও ডিএনসিসির মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

কামরুল ইসলাম সাবেক সেনা কর্মকর্তা হলেও বর্তমানে তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। এটিএস সোলিউশন নামের তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার বার্ষিক আয় প্রায় ২১ লাখ টাকা এবং অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়াও অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে এক কোটি ১২ লাখ টাকা মূল্যমানের যানবাহন, আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স।

জাপার এ প্রার্থীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৮ বিঘা কৃষি জমি, ৭ কাঠা অকৃষি জমি এবং ৭ কোটি টাকা মূল্যমানের ভবন। তবে ব্যাংকের কাছে তার কোনো ঋণ নেই। এমফিল ডিগ্রিধারী কামরুলের নামে থানায় কোনো দিন মাললাও হয়নি।

এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) হয়ে প্রথমবারের মতো ডিএনসিসির মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাজেদুল হক রুবেল। তিনি পেশায় একজন দন্ত চিকিৎসক এবং তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। তার নামে বর্তমানে কোনো মামলা না থাকলেও ২০০৬ সালে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়।

সাজেদুলের অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগদ ৫ হাজার টাকা, ২ ভরি স্বর্ণ, ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র, দুটি মোবাইল ফোন, ব্যাংকে জমা ৫০০ টাকা। তার স্ত্রীর নামে মোটামুটি কিছু অর্থ সম্পদ থাকলেও তার নামে ব্যাংকে ৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে।

উল্লেখ্য, এবারের ডিএনসিসির নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাই শেষে আগামী ৯ জানুয়ারি তাদের প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হবে এবং ১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর পর প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা শেষে আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।