বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় প্রায় দুবছর আগে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। আজ বুধবার রায় প্রদানকারী তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার এ রায়টি প্রকাশ করা হলো।

pilkhana murder bdr murder

রায়ের দৈর্ঘ্য এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ রায়। এই রায়ে ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ছাড়াও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ৭৯ জনকে খালাস দেয়া হয়।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে রায় দেন।

সংক্ষিপ্ত ওই রায় ঘোষণার পর থেকেই হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার কাজ শুরু করেন বিচারপতিরা।

বিচারপতি শওকত হোসেন লিখেছেন এক থেকে ১১ হাজার ৪০৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত, এরপর ১১ হাজার ৪০৭ থেকে ২৭ হাজার ৯৫৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখেছেন বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী এবং এরপর থেকে ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখেছেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার।

এ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে ছয় বছর আগে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালতের দেয়া রায় অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হলো।

নিয়ম অনুযায়ী, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় প্রকাশের পর আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবে উভয়পক্ষই। এরপর আপিলের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হবে। যদিও এরপর রিভিউ আবেদন করার সুযোগ থাকবে। রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দপ্তর পিলখানাকে রক্তে রঞ্জিত করে একই বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। তাদের হাতে দেশের মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় দুটি ভাগে বিচার কাজ চলছে। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনে করা মামলার বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। আর হত্যার অভিযোগে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে করা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় চলছে।

পিলখানা হত্যার ঘটনায় ২০০৯ সালের ৪ মার্চ লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবজ্যোতি খীসা বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি পরে ৭ এপ্রিল নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। মামলায় ডিএডি তৌহিদসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয় প্রায় এক হাজার জওয়ানকে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়। হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। একই সঙ্গে ৮০১ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

এর মধ্যে হত্যা মামলায় বিচার শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত রায় দেন। সে সময়কার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি) বহুল আলোচিত এ মামলায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ২৭৮ জনকে বেকসুর খালাস দেন। এর পর নিম্ন আদালত থেকে ফাঁসির আসামিদের সাজা অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। আর কারাবন্দি আসামিরাও আপিল করেন। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও আপিল করা হয়। সব আবেদনের শুনানির পর বিচার শেষে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ে নিম্ন আদালতে ১৫২ জন ফাঁসির আসামির মধ্যে ১৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৮ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও চারজনকে খালাস, নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১২ জনকে খালাস এবং নিম্ন আদালতে খালাসপ্রাপ্ত ৩৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া নিম্ন আদালত ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। ইউএনবি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.