আপনি পড়ছেন

চীনে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন প্রায় ১৩২টি দেশে, বিশেষত শীতপ্রধান এলাকায়, ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে মোটাদাগে দেখা দেওয়া প্রশ্নটির- অর্থাৎ উষ্ণ আবহাওয়ায় এটি কেমন আচরণ করবে- উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।

covid 19 heat spread home

ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো শ্বাসকষ্টজনিত নতুন রোগটি এমন এক ধরনের ভাইরাসঘটিত, যা সাধারণত শীতল পরিবেশে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে। এ ভাইরাসের সংক্রমণে বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত হালকা বা মাঝারি ধরনের উপসর্গ যেমন- জ্বর ও কাশি অনুভব করে। তবে বেশি বয়স্ক এবং যারা আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগছেন- এমন ব্যক্তিরা নিউমোনিয়াসহ আরও গুরুতর সমস্যায় ভুগতে পারেন।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত ভাইরাসটি প্রতিটি মহাদেশে ছড়িয়েছে। তবে এখনও দক্ষিণ গোলার্ধে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই মৌলিক কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পর ভাইরাসটি কী রকম আচরণ করতে পারে?

গরম আবহাওয়ায় ভাইরাসটির প্রকোপ কি সত্যিই কমে আসবে?

কেউ জানেন না। নতুন এ ভাইরাসটি ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ (চীনে তখন শীত) শনাক্ত হয়েছে। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানী বলছেন, উষ্ণ আবহাওয়ায় কোভিড-১৯ এর বিস্তার যে কমতে শুরু করবে- এমনটা বলার মতো কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

covid 19 heat spread home

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক প্রধান ডা. মাইকেল রায়ান বলছেন, আমাদের এটা ধরে নিতে হবে যে, ভাইরাসটির বিস্তারের ক্ষমতা অব্যাহত থাকবে এবং এটি গ্রীষ্মকালে (গরমকালে) ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অদৃশ্য হয়ে যাবে- এমনটা বললে তা মিথ্যা আশা ছাড়া আর কিছু হবে না।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সংক্রামক রোগ বিষয়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ডেল ফিশারও এ বিষয়ে একমত হতে পারেননি যে, গরম আবহাওয়া এর বিস্তারকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে।

বরং তিনি বলছেন, বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে কয়েক বছর অবস্থানের পর এটি সম্ভবত একটি ফ্লুর মতো প্যাটার্নে (আকার) পরিণত হবে। যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা আমাদের নেই, সেহেতু আবহাওয়া যাই হোক না কেন, আমরা অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছি।

তবে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ সাজাদি মনে করেন, আবহাওয়া একটি ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি এবং তার সহকর্মীরা দেখেছেন, অঞ্চলভেদে ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সঙ্গে কোভিড-১৯ এর মজবুত প্রাদুর্ভাবের মিল রয়েছে।

সাজাদি বলেছিলেন, আমরা যদি মৌসুমের (ঋতু) ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে পারি, তবে তা ভাইরাসটির ব্যাপারে নজরদারি এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করতে পারে।

কীভাবে ভাইরাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোভিড-১৯?

নতুন এ ভাইরাসটি জিনগতভাবে সার্স (এসএআরএস) এবং মার্সের (এমইআরএস) সাথে সম্পর্কিত। ২০০২ সালের শেষদিকে চীনে প্রথম সার্সের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং ২০০৩ সালের জুলাই পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা (দুর্যোগ হিসেবে) দেওয়ার আগে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮ হাজার মানুষকে অসুস্থ করে ছাড়ে।

কিন্তু গ্রীষ্মের আগমনেও থামেনি সার্স। এশিয়া এবং কানাডার এপিসেন্টারগুলি থেকে ভ্রমণ বন্ধ করে দেওয়ার মতো অসাধারণ পদক্ষেপ এবং পাম সিভেটসের- একটি গণক্লিং যা এই রোগকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়, ব্যাপকহারে সংকলন করা হয় যাতে এই রোগকে থামিয়ে দেওয়া যায়।

মার্সের সংক্রমণও পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। উট থেকে মানুষের শরীরে বিক্ষিপ্তভাবে এর বিস্তার ঘটে। যা ২০১২ সালে চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে সীমিত আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ গবেষণা ও নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক মাইকেল অস্টারহলম্ বলেন, আমি মনে করি না যে, আমরা সার্স এবং মার্সের ক্ষেত্রে যা দেখেছি তার ওপর ভিত্তি করে মৌসুম ও করোনাভাইরাস সম্পর্কে কিছু বলতে পারি।

তিনি বলছেন, ‘আমি যখন আরব উপদ্বীপে ছিলাম তখন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তাপে মার্স ছড়াতে দেখেছি।’

দক্ষিণ গোলার্ধে কেন এটি মহামারি আকার ধারণ করেনি?

অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, কোনো কোনো মহামারি মাঝে মাঝে বিশ্বের প্রতিটি দেশে পৌঁছাতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগেছে। সুতরাং এখনই এমনটা বলা খুব তাড়াহুড়ো করা হবে।

এ ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণও একটি ব্যাপার হতে পারে। কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলো ফ্লু, হাম এবং ম্যালেরিয়ার মতো আরও অনেক রোগের মতো। আর তাই নতুন এ ভাইরাসটি শনাক্তকরণও চ্যালেঞ্জের বিষয়।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড বায়োস্ট্যাটিস্টিকস বিভাগের প্রধান বেঞ্জামিন কাউলিং বলছেন, তার সন্দেহ হচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব বিস্তৃত, যেটা থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমেই প্রমাণ হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, বেশিরভাগ উষ্ণপ্রধান দেশই শীতপ্রধান দেশগুলোর মতো অতটা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখেনি।’

কাউলিং আরও মনে করেন, শীতের পরিবেশে মানুষ কী রকম আচরণ করে তার একটি প্রভাব থাকার সম্ভাবনাও থাকতে পারে।

তিনি আরও বলছেন, ‘গ্রীষ্মাঞ্চলের তুলনায় শীতপ্রধান এলাকার মানুষ বাড়ির অভ্যন্তরে বেশি সময় কাটাচ্ছে। আর বাড়ির ভেতর বেশি সময় থাকার মানে হলো- সম্ভবত অনেকে মিলে এক ঘরে বা বাড়িতে বেশি সময় থাকছে, ফলে তারা আক্রান্ত হচ্ছে।’

তবে তাপমাত্রার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া অধ্যাপক সাজাদি স্বীকার করেছেন যে, মহামারি বিভিন্ন কারণ দ্বারা প্রভাবিত। তবে এটা অনুমান করা যায় যে, শীতপ্রধান অঞ্চলের দেশগুলো করোনভাইরাসে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও এটা ব্যাপার নয় যে, ইরান ও ইতালির মতো দক্ষিণের দেশে ব্যাপকহারে সংক্রমিত হয়েছে।

তবে কাওলিং বলছেন, উচ্চ তাপমাত্রার ফলে ভাইরাসের ক্রমাগত বিস্তার পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলছেন, ‘আমি মনে করি না যে, গ্রীষ্মে এটি থেমে যাবে সেটা আমরা বলতে পারি। এটি ধীর গতিতে বিস্তার লাভ করতে পারে। কিন্তু এটি থামবে না।,

কাওলিং আরো বলছেন, ‘যে অবস্থা চলছে তাতে আমরা এটা ধরেই নিতে পারি যে, আগামী নয় মাসের মধ্যে প্রত্যেকটি দেশে এর (কোভিড-১৯) উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে… আমরা এখন সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছি।’

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.