করোনাভাইরাস: দ্রুত লকডাউন তুলে নিলে ঘটতে পারে মহাবিপর্যয়

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে দেশে যে লকডাউন আরোপ করা হয়েছে, তা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করলে ঘটে যেতে পারে মহাবিপর্যয়— এমন সতর্কতামূলক মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই মারণ ভাইরাসে যে দেশগুলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইতালি ও স্পেন। অথচ ইউরোপের এই দেশদুটি ইতোমধ্যেই লকডাউন কিছুটা শিথিল করার কথা ভাবছে।

তাদের এমন মনোভাব দেখেই মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন সতর্কতা জারি করলো। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেরিবাইসাস সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, “কিছু অর্থনৈতিক মন্দা মেনে নিয়ে হলেও দেশগুলোর উচিত লকডাউন শিথিল করার আগে সতর্ক থাকা। কারণ একটু অসতর্কতার কারণে নেমে আসতে পারে মহাবিপর্যয়।”

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বে ১৬ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এ ছাড়া ১২ লাখ লোক এখনো চিকিৎসাধীন এবং তাদের প্রায় ৫০ হাজারের অবস্থা গুরুতর বলে বিবেচিত হচ্ছে।

টেড্রোস বলেন, “ইউরোপের কয়েকটি দেশ লকডাউন শিথিল করে দিচ্ছে। এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বকে একটি মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”

স্পেন ও ইতালি কেনো লকডাউন শিথিল করছে?

স্পেনে করোনাভাইরাসজনিত কারণে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৭ দিনের মধ্যে শুক্রবার তাদের মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো সবচেয়ে কম। সেটাও ছয়শর বেশি। এর পরপরই লকডাউন কিছুটা শিথিল করার ঘোষণা দিলো দেশটি।

সোমবার থেকে ‘অতিপ্রয়োজনীয়’ নয়, এমন খাতে লোকজনকে কাজ করার অনুমতি দিবে স্পেন। এমন খাত বলতে নির্মাণ খাত, উৎপাদনমুখী কারখানায় কাজ করাকে বোঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের বলে দেওয়া হয়েছে যে সামাজিক দূরত্ববিধি ঠিকই কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

এ দিকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে তার দেশে চলা লকডাউন মে মাসের তিন তারিখ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এতোদিন লকডাউন জারি রেখে আমরা যে সাফল্য অর্জন করতেছি, তা হারানো যাবে না।”

তারপরও কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ইতালি সরকার জানিয়েছে, ১২ মার্চের পর থেকে যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, আগামী মঙ্গলবার থেকে তা খুলে দেওয়া হবে।

কন্তে বলেছেন বইয়ের দোকান, বাচ্চাদের জামা-কাপড়ের দোকানগুলো খোলার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে লকডাউন শুরুর পর থেকেই মুদি দোকান ও ফার্মেসি সব সময় খোলা রাখার অনুমতি ছিলো।

শুক্রবার ইতালিতে মারা গেছেন ৫৭০ জন, যা আগের তুলনায় কিছুটা কম। এ ছাড়া নতুন আক্রান্তের হারও কিছুটা কমে এসেছে।

ইউরোপের অন্য কিছু দেশের অবস্থা

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার বলেছেন তার দেশে মে মাসের পাঁচ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন চলতে থাকবে।

তুরস্কে প্রায় বিনাঘোষণায় ৪৮ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, কারফিউ শুরু করার মাত্র দুই ঘণ্টা আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে রাস্তাঘাটে হঠাৎ করেই বহু লোকের ভিড় জমে গেছে বাজার-সদাই করার জন্য।

পর্তুগালের প্রেসিডেস্ট মার্সেলো রেবেলো দে সুসা জানিয়েছেন, তার দেশে মে মাসের এক তারিখ পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি থাকবে।

যুক্তরাজ্য জানিয়ছে, বর্তমান অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী- তা এখনো স্পষ্ট। তবে বর্তমান অবস্থা জারি থাকবে যতক্ষণ না দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গতি কি একটু কমেছে?

কিছু কিছু দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া আসলেই একটু কমেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভাইরাস যতোটা ছড়ানোর ততোটা ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের মতে, কিছু ভালো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবং মহামারীর চূড়ান্ত রূপ থেকে হয়তো এবারের মতো বাঁচা যাবে।

এর মধ্যে টেড্রোস জানিয়েছেন যে, কিছু কিছু দেশে ভাইরাস অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে- যেমন আফ্রিকা। আফ্রিকার কোনো কোনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, “আফ্রিকার অন্তত ১৬টি দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। এই দেশগুলোতে ব্যাপকহারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই সব দেশে অত্যন্ত খারাপ অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এর মধ্যেই ভেঙে পড়েছে। আগামী কয়েক দিনে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। কারণ এই সব অঞ্চলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অপ্রতুল।”