করোনাভাইরাস নিয়ে বার্মিজ বিজ্ঞানীদের নতুন তথ্য

বিশ্বব্যাপী ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাস। দুই শতাধিক দেশে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে এটি। বেশ কয়েকটি দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে এর সংক্রমণে। মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে দিন-রাত গবেষণা। এখন পর্যন্ত কার্যকর কিছু উদ্ভাবন করা না গেলেও এসব গবেষণায় বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। তারই ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাস নিয়ে এবার নতুন তথ্য প্রকাশ করলেন মিয়ানমারের বিজ্ঞানীরা।

বাদুড়ের ওপর গবেষণা করে ছয় ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করলেন মিয়ানমারের বিজ্ঞানীরা

তারা দাবি করেছেন, বাদুড়ের ওপর গবেষণা চালিয়ে আরো ছয় ধরনের ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।

পোলস ওয়ান নামের একটি জার্নাল বলছে, দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার সরকার নিজেদের অর্থায়নে ‘প্রেডিক্ট’ প্রকল্পের অধীনে বাদুড়ের ওপর গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ওই গবেষণা করতে গিয়েই বাদুড়ের শরীরে ছয় ধরনের ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বর্তমান বিশ্বে সার্স-কভ-২ নামের যে ভাইরাসটি তাণ্ডব চালাচ্ছে, শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসগুলোও একই গোত্রের। তবে জিনগতভাবে এই ভাইরাসগুলোর সঙ্গে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের পার্থক্য রয়েছে। আর সে কারণেই শনাক্ত হওয়া ছয় ধরনের ভাইরাস মানুষের জন্য অতটা ক্ষতিকর নয়।

জার্নালটির তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমার সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণা দলের সহকারী হলেন লেখক সুজান মারে। তিনি তাদের গবেষণার আলোকে বলেছেন, অনেক করোনাভাইরাস আছে যা মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে প্রাণীর দেহে কী ধরনের ভাইরাস আছে সেটা আগে থেকে যদি শনাক্ত করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতের বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

বাদুড়ের ওপর গবেষণা করে ছয় ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করলেন মিয়ানমারের বিজ্ঞানীরা

অন্যদিকে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক চলমান আতঙ্ক কোভিড-১৯ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তারা দেখেছেন তিন ধরনের ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এগুলোকে এ, বি ও সি টাইপে ভাগ করেছেন।

তারা বলছেন, গবেষণায় দেখা যায়, মূল ভাইরাসটি (টাইপ-এ) মানুষের দেহে প্রবেশ করে বাদুড় থেকে পাঙ্গোলিনসের মাধ্যমে। তবে উৎপত্তিস্থল চীনে এই ভাইরাসের হার ছিল তুলনামূলক কম। বরং দেশটিতে টাইপ-বি ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা গেছে। এটি গেল ক্রিস্টমাসের মৌসুমে ছড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে, টাইপ-এ বা মূল ভাইরাসটির সংক্রমণ বেশি অস্ট্রেলিয়ায়। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও মূল ভাইরাসটি সংক্রমণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত নমুনার দুই-তৃতীয়াংশের মধ্যে টাইপ-এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

তবে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে টাইপ-বি ভাইরাস। দেশটি থেকে সংগৃহীত নমুনার তিন-চতুর্থাংশের মধ্যেই টাইপ-বি ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর বাইরে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি পাওয়া যায়।

গবেষকরা বলছেন, টাইপ-সি ভাইরাসটি টাইপ-বি এর বিবর্তিত রূপ। যা সিঙ্গাপুর হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে।

গবেষকরা মনে করছেন, সার্স-কভ-২ নামের এই ভাইরাসটি মানবশরীরে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে তার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে বিবর্তিত হচ্ছে। অবস্থা ও পরিবেশ ভেদে সেটি ভিন্ন রকমেও বিবর্তিত হচ্ছে বলে দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা।

ভাইরাসটির এমন বৈশিষ্ট্য জানতে পেরে বিস্মিত হয়েছেন খোদ গবেষকরাও। যেমন- তারা গবেষণায় দেখতে পান, জানুয়ারিতে প্রথম দুই ধরনের ভাইরাসের অস্তিত্বই পাওয়া গেছে। আবার উৎপত্তিস্থল চীনে টাইপ-বি ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হলেও যুক্তরাজ্যের পশ্চিম উপকূলে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে টাইপ-এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে।