গবেষণা থেকেই ছড়ায় করোনাভাইরাস, ছিলো মার্কিন অনুদানও!

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় গোটা বিশ্ব। চারদিকে মানুষ আতঙ্কিত-বিপর্যস্ত। প্রতিমুহূর্তে আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। পাশাপাশি ভয়ংকর রূপ ধারণ করা এই ভাইরাসের উৎপত্তি কীভাবে কিংবা এ থেকে বাঁচার উপায়ই বা কী তা নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে গবেষণা। এবার নতুন একটি গবেষণার বিষয় সামনে এসেছে। এতে বলা হচ্ছে- মার্কিন সরকারের অর্থায়নে চীনের উহানে বাদুড়ের ওপর চলছিল গবেষণা। ওই গবেষণা করতে গিয়েই নাকি ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস।

ডেইলি মেইল বলছে, মার্কিন সরকারের অর্থায়নে চীনের উহানে বাদুড়ের ওপর পরিচালিত গবেষণা থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস।

নতুন এই তথ্য প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল। এ ব্যাপারে তাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেছে সংবাদ মাধ্যমটি।

বলা হচ্ছে, চীনের মূল ভূখন্ডে অত্যাধুনিক যত প্রতিষ্ঠান আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি। আর এই ল্যাবরেটরিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের অধীনে গুহা থেকে সংগৃহীত বাদুড়ের ওপর করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল। সেখান থেকেই প্রথমে করোনাভাইরাস স্থানীয় পশুর মার্কেটে এবং তা থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যা এখন দাবিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা বিশ্ব।

ডেইলি মেইল দাবি করেছে, তাদের কাছে থাকা ডকুমেন্ট বলছে, উহান থেকে এক হাজার মাইল দূরের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ের একটি গুহা থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে অন্তত ১০ বার বাদুড়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গুহা থেকে ধরে আনা ওই বাদুড়ের ওপর করোনাভাইরাস নিয়ে ওই ল্যাবে গবেষণা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রকল্পে মার্কিন সরকারের অনুদান ছিল ৩৭ লাখ ডলার।

বলা হচ্ছে, ওই গবেষণাগার থেকেই দুর্ঘটনাক্রমে ভাইরাস অবমুক্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমান বিশ্বে যে কোভিড-১৯ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, তার জিনোম পরীক্ষা করে দেখা গেছে তার সঙ্গে মিল আছে ইউনানের গুহার ওই বাদুড়ের শরীরে থাকা ভাইরাসের।

ডেইলি মেইল বলছে, মার্কিন সরকারের অর্থায়নে চীনের উহানে বাদুড়ের ওপর পরিচালিত গবেষণা থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস

ডেইলি মেইল বলছে, এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে মনে করা হয়, করোনাভাইরাস উহানের একটি পশুর মার্কেট থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়েছে। তবে চীনের ওই ল্যাবরেটরি থেকে দুর্ঘটনার কথা এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

এ ব্যাপারে অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে, বাদুড়ের দেহ থেকে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে ওই ল্যাবরেটরিতে। ওই রক্তে ছিল করোনাভাইরাস। এ থেকে প্রথমে সেখানকার বিজ্ঞানীরা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন। পরে তাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হন সাধারণ মানুষ।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি বলছে, উহানের ওই ল্যাবে ‘ডিসকভারি অব এ রিচ জিন পুল অব ব্যাট সার্স-রিলেটেড করোনাভাইরাস প্রোভাইডস নিউ ইনসাইটস ইনটু দ্য অরিজিন অব সার্স করোনাভাইরাস’ শীর্ষক গবেষণার একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। অ্যানিম্যাল এথিকস কমিটি অব দ্য উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির অনুমোদনক্রমে পশু চিকিৎসকরা ওই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

চীনে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর দাবি করা হয়, উহানের একটি পশুর মার্কেট থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। উহানের আলোচিত এই গবেষণাগার থেকে ওই পশুর মার্কেটের দূরত্ব ১০ মাইল।

ডেইলি মেইল বলছে, মার্কিন সরকারের অর্থায়নে চীনের উহানে বাদুড়ের ওপর পরিচালিত গবেষণা থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস

ডেইলি মেইল আরো বলেছে, চীনের ওই ল্যাবরেটরিতে অর্থ খরচ করায় মার্কিন সরকারের সমালোচনা করেছেন হোয়াইট কোট ওয়েস্ট-এর প্রেসিডেন্ট অ্যান্থনি বেলোত্তি। সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে কড়া সমালোচনা করার কারণে ‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত ।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যান ম্যাট গায়েটজ বলেছেন, উহানের ওই ল্যাবরেটরিতে পশুদের ওপর নিষ্ঠুর পরীক্ষা চালাতে মার্কিন সরকার বছরের পর বছর অর্থ ব্যয় করেছে- এটা জেনে খুব বিরক্তি লাগছে। ওই ল্যাব থেকেই বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। অথচ মার্কিন কর্তৃপক্ষের এতে কোনো তদারকি ছিল না।

মার্কিন জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত মরণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বের ১৭ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি। তবে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে ৪ লাখ ৪ হাজারের বেশি।