করোনায় যে ৫ ধরনের মানুষের মৃত্যুর হার বেশি

গত বছরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এর পর তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটিতে ২০ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছে এক লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। তবে সুস্থ হয়েছেন সোয়া ৫ লাখের বেশি। গবেষকরা বলছেন, নতুন এ ভাইরাসটি বেশ ভয়ংকর হলেও সবাই মারা যাচ্ছে না। তবে এতে আক্রান্ত হওয়ার পর পাঁচ ধরনের মানুষের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি।

গবেষকরা বলছেন, বেশি বয়সীদের করোনায় মৃত্যুর হার বেশি, ছবি- সিএনবিসি

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) গবেষকরা এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং বিগত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, পাঁচ ধরনের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলে বেশি মারা যাচ্ছে।

সিডিসির ওই গবেষণার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য মিরর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ ওই পাঁচ ধরনের মানুষের কথা বলা হয়েছে।

বয়স

গত কয়েক মাসে দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা বেশি বয়সী তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সিডিসির গবেষণা বলছে, ৭০ বছরের বেশি বয়সী করোনা রোগীদের মারা যাওয়ার হার বেশি। চীনের উহানের গবেষকরা সেখানকার দুটি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ১৯১ জনের ওপর একটি গবেষণা করেছেন। এতে দেখা যায়, আক্রান্তদের মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটি বড় ফ্যাক্টর। তাছাড়া আক্রান্তদের অবস্থা কতটা গুরুতর হবে তাও অনেকটা নির্ভর করে বয়সের ওপর।

গবেষকরা বলছেন, মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যবহার করে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। আর করোনাভাইরাসের অন্যতম টার্গেট হলো- মানুষের ফুসফুসে পৌঁছে তা ধ্বংস করে দেওয়া। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে ভাইরাসটি ফুসফুসে পৌঁছার আগেই ধ্বংস বা দুর্বল হয়ে যায়। যেটা বয়স্কদের ক্ষেত্রে হতে পারে না।

লিঙ্গ

বিভিন্ন গবেষণা বা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত নারীদের তুলনায় পুরুষের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানতে পারেননি গবেষকরা। তবে তারা মনে করছেন, নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি সময় ঘরে অবস্থান করেন। তাছাড়া নারীরা করোনাভাইরাস নিয়েও বেশি সিরিয়াস। বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব সহকারেই বিবেচনা করছেন। কিন্তু পুরুষের বেলায় সেটা ততটা হচ্ছে না। তারা ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় হোক বাইরে যাচ্ছেন। অন্যদের সঙ্গে মিশছেন। এ কারণে পুরুষের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি।

গবেষকরা বলছেন, করোনায় নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি, ছবি- আল-জাজিরা

এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে- ইতালিতে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ। অথচ দেশটিতে যারা মারা গেছে তার ৬৮ ভাগ পুরুষ। অন্যদিকে, গ্রিসে জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ পুরুষ। কিন্তু করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৭২ শতাংশ।

শারীরিক অবস্থা

দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিহত করতে শারীরিক সক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেসব মানুষ আগে থেকেই দুর্বল এবং ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের সমস্যা, হজমের সমস্যা বা অন্যকোনো জটিল রোগে ভুগছেন, তাদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশি। কারণ এসব রোগ থাকলে এমনিতেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে করোনাভাইরাস সহজেই তাদের দুর্বল করে ফেলে এবং ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এ ব্যাপারে নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ বলছে, চীনের উহানে প্রথম এক হাজার জনের মধ্যে যারা মারা গেছে, তাদের বেশিরভাগ মানুষের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হার্টের সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনোভাবে অসুস্থ ছিল।

ওজন

সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূল তথা বেশি ওজনের লোকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার বেশি। গত কয়েক মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া লোকদের ওপর জরিপ চালিয়ে এমন দাবি করেছেন মার্কিন গবেষকরা।

গবেষকরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত স্থূল লোকদের মৃত্যুর হার বেশি, ছবি- মার্কেটওয়াচ

ফরাসি গবেষকরা মনে করছেন, বেশি ওজনের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে এত বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয় দিক থেকেই এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

দুনিয়ার সকল গবেষক বা এ সংক্রান্ত চিকিৎসক এ ব্যাপারে একমত যে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যার যত বেশি, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার সম্ভাবনাও তার তত বেশি। এ কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউন ও কারফিউয়ের মধ্যেও ঘরের ভেতর হালকা ব্যায়াম ও ভালো তথা স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সিডিসির গবেষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত যেহেতু কোভিড-১৯ থেকে রক্ষায় কোনো টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, সেহেতু একমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই পারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের দেহে দ্রুত উপসর্গগুলো প্রকাশ পাচ্ছে এবং দ্রুত তাদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এমনকি লাইফ সাপোর্ট দেওয়ার পরও বেশিরভাগই মারা যাচ্ছে।