বিশেষজ্ঞদের ধারণা, হাসপাতালগুলো করোনার বড় উৎসে পরিণত হচ্ছে

দেশে প্রতিদিনই অসংখ্য চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংকট ও নিম্ন মানের পিপিই’র সরবরাহকে। এ ছাড়া অনেক রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সে তথ্য তারা গোপন রাখছেন। এতে করে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ভাইরাসটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে।

হাসপাতালগুলো করোনার বড় উৎসে পরিণত হচ্ছে

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসেসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব ডা. ইকবাল আর্সালান খান বলেন, মানসম্পন্ন পিপিই থাকলেও অনেকে আবার তা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানেন না। তাছাড়া এর ব্যবহার সম্পর্কে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে থেকে কোনো প্রশিক্ষণ না দেয়াটাও একটা কারণ।

তিনি বলেন, সামাজিকতার ভয়ে ও চিকিৎসা না পেতে পারেন, এমন শঙ্কায় অনেক কোভিড-১৯ রোগী তাদের তথ্য গোপন রাখছেন। এতে করে চিকিৎসক ও অন্যান্য রোগীদের মধ্যেও ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে হাসপাতালগুলো লকডাউন করে দিতে হচ্ছে।

বিএমএর বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নজরে আনার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভালো মানের পিপিই বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক লাখ ১০ হাজার মানুষের মধ্যে ১৩ লাখ পিপিই বিতরণের কথা বলা হলেও এখনো এটির সংকট রয়েছে। অথচ গড়ে ১৩টা করে পিপিই পাওয়ার কথা। বাকিগুলো গেল কোথায়?

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জরিপে দেখা গেছে, এখনো ২৫ শতাংশ চিকিৎসক, ৪০ শতাংশ নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী পিপিই পাননি, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়কারী ডা. নিরুপম দাস বলেন, ভাইরাসটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই অধিক সংখ্যক চিকিৎসককে একসঙ্গে কাজে লাগানোর কারণে এমনটা হচ্ছে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে কোনো পরিকল্পনাও ছিল না।

হাসপাতালগুলো করোনার বড় উৎসে পরিণত হচ্ছে

তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোনো পিপিই সরবরাহ করা হয় না। নিজেদেরই কিনে নিতে হয়। সেখানে কেউ করোনায় সংক্রমিত হলে হাসপাতাল লকডাউন করতে চায় না কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক হাসপাতালে রোগী হারানোর ভয়ে চিকিৎসকদের পিপিই পরতে দেয়া হয় না। তাছাড়া রোগীরা তাদের করোনা উপসর্গ লুকিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়। কারণ উপসর্গের কথা বললে অনেক হাসপাতাল তাদের চিকিৎসা করাতে চায় না। এতে করে চিকিৎসকদের মধ্যে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যদি শুরু থেকেই সবাইকে করোনা রোগী ধরে তারপর প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভাগ করে ফেলা যেত, তাহলে আর এই সমস্যার সৃষ্টি হতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার উৎপত্তিস্থল উহানে ৪০ শতাংশ সংক্রমণ ছড়িয়েছে হাসপাতাল থেকে। বাংলাদেশেও এখন তাই হচ্ছে। চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতাল লকডাউন করে দেয়া হচ্ছে। মোট কথা, ভাইরাস সংক্রমণের বড় সোর্সে পরিণত হচ্ছে হাসপাতালগুলো।

সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৬৪৪ জন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক আছেন ২৮৯ জন এবং ১১২ জন নার্স। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৩ জন।

তবে বিডিএফের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৩৭৩ জন চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন। একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৮ জন। আর সংক্রমিত ২২০ জন নার্সের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ছয় জন।