সার্সের চেয়ে চোখের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ১০০ গুণ বেশি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস তার সমগোত্রীয় সার্স ভাইরাসের তুলনায় এক শত গুণ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে চোখেরি মাধ্যমে। হংকং ইউনিভার্সিটির আওতাধীন স্কুল অব পাবলিক হেলথের একদল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিখ্যাত মেডিকেল সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে তাদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতীকী ছবি

এতে বলা হয়, হংকংয়ের গবেষকরা এইচ৫এন১ ভাইরাস (বার্ডফ্লু) ও সার্স ভাইরাস মানুষের চোখে কী রকম সংকমণের সৃষ্টি করে তা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছেন। এতে তারা দেখতে পান, ওই দুই ভাইরাস থেকে করোনার সংক্রমণ ১০০ গুণ বেশি।

আমাদের চোখের অগ্রভাগ সাধারণত পাতলা একটি স্বচ্ছ আচ্ছাদন দিয়ে আবৃত থাকে। যা চোখের মনির ছিদ্রে কোনো বালুকণা বা সূক্ষ্ম কোনো কিছু প্রবেশে বাধা দেয়।

গবেষণার পরিচালক ডক্টর মিশেল চ্যান চি-য়াই বলান, সার্স ও বার্ডফ্লু ভাইরাসের তুলনায় করোনাভাইরাস চোখের অনেক ক্ষতি করে। সংক্রমণও অনেক বেশি হয়।

তিনি বলেন, আমরা মানবদেহের চোখের টিস্যু নিয়ে কালচার করেছি। তারপর আমাদের গবেষণা পরিচালনা করেছি। আমরা বার্ডফ্লু , সার্স ও করোনাভাইরাস দিয়েছি এসব টিস্যুতে। এতে দেখা গেছে, চোখের অগ্রভাগে ওই দুটি ভাইরাস থেকে করোনাভাইরাস ৮০ থেকে ১০০ গুণ বেশি সংক্রমণ ঘটিয়েছে। ভাইরাসটি খুব বেশি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে এ রকম হতে পারে।

সার্স গোত্রের ভাইরাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস। হিসাবও তাই বলে। ২০০০ সালে সার্স ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে। সেবার সর্বমোট আট হাজার মানুষের সংকমণ হয়েছিল। অথচ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম চার মাসে ৪০ লাখের বেশি মানুষকে সংক্রমিত করেছে।

প্রতীকী ছবি

ভাইরাসটি যে চোখের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে সে আলোচনা প্রথম সাড়া পায় ইতালির এক নারীর চোখে সংক্রমণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের বরাতে জানা যায়, চীনের উহান থেকে ৬৫ বছর বয়সী এক নারী ইতালি ফিরে এসে সুস্থই ছিলেন। তার মধ্যে কোনোরকম উপসর্গ লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর তার চোখে তীব্র প্রদাহ শুরু হলে হাসপাতালে যান।

চিকিৎসকরা তার চোখের পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখেন সেখানে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি আছে। তারা এটি দেখে বেশ অবাক হন। ওই নারী চীন থেকে ফেরার ২১ দিন পর পরীক্ষাটি করা হয়। এতেই বোঝা যায়, ভাইরাসটি চোখে ওই ২১ দিন জীবিত ছিলো।

ইতালির গবেষক দল বলছে, ওই নারীর চোখের পানি ইতালিতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম একটি উৎস ছিলো। এতে বোঝা যায়, ভাইরাসটি মানবদেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পাশাপাশি চোখে প্রবেশ করেও সংক্রমণ ঘটায়।

তারা বলেন, শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে হাত দিয়ে চোখ, মুখ, নাক স্পর্শ না করার কথা। সেটি আরো জোর দিয়ে সবাইকে মেনে চলতে হবে।