আপনি পড়ছেন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে লকডাউন, কারফিউ বা অন্যান্য বিধি-নিষেধ। দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি থেকে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। অনেকের মনেই প্রশ্ন, কবে নাগাদ শেষ হবে এই লকডাউন বা বিধি-নিষেধ। আর এর সমাপ্তি ঘটলেও সেটা কীভাবে হবে? মানুষের এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। 

newyork city empty roadলকডাউনে ফাঁকা নিউইয়র্কের রাস্তা

লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হলে মানুষের মধ্যে তার কী প্রভাব পড়বে বা কী সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা করেছে গণমাধ্যমটি। তাছাড়া লকডাউন কীভাবে উঠিয়ে নিলে ক্ষতি কম হবে- সে বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গণমাধ্যমটি বলছে, সংক্রমণের সংখ্যা কমে আসলে তবেই লকডাউন শিথিল করা হবে। তবে জনজীবন আগের রূপে হয়তো খুব সহসাই ফিরবে না। কারণ সম্পূর্ণরুপে লকডাউন উঠিয়ে নিলে ফের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে।

তাহলে কি লকডাউন উঠানো যাবে না?

করোনাভাইরাস মূলত একজন থেকে তিনজনে ছড়ায়- এ রকম একটি ছোঁয়াচে ভাইরাস।

এক হিসাবে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মোট জনস্যংখ্যার পাঁচ শতাংশ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ছয় কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে লকডাউন উঠিয়ে দেয়া হলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আরো বেড়ে যাবে। এই অবস্থা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

অন্য কোনো সুযোগ কি নেই?

লকডাউন দেয়ার কারণে দেশগুলোতে ৭০ শতাংশ সংক্রমণ কমে গেছে। অর্থাৎ একজনের মাধ্যমে তিনজনের যে সংক্রমণের শিকল ছিলো তা ভেঙে একজনে নেমে এসেছে।

এখানে অন্য কিছু করার মতো সুযোগ আপাতত নেই। যার ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মানুষের বর্তমান জীবনযাপনে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সংক্রমণ কমে এলে স্কুল তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যেতে পারে। এর বাইরে অন্য কিছু করার সুযোগ নেই।

lockdown in franceলকডাউনে ফাঁকা প্যারিসের আইফেল টাওয়ার এলাকা

যারা বেশি ঝুঁকিতে আছে তাদের আলাদা করে রক্ষা পাওয়া যাবে কি?

লকডাউনের পরিবর্তে এই উপায়টি কাজে লাগানো যায়। আমরা সবাই জানি, করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের ৮০ শতাংশই কোনো চিকিৎসা ছাড়া সুস্থ হয়ে ওঠে। বাকি ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে।

সমাধান হিসেবে সমাজ থেকে এই ২০ শতাংশ জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে আমরা দৈনন্দিন কাজে চালিয়ে যেতে পারি। কিন্তু তা হবে অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। কেননা কাউকে বললেই সমাজ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা যায় না।

ধরুন তাদের আপনি বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা হাসপাতালে রেখে দিলেন, তার দেখভাল করতে একজন না একজন লাগবেই। এ রকম কয়েক শ মানুষ একসঙ্গে থাকলে তাদের দেখভাল করার জন্য না হলেও ১০ জনের প্রয়োজন। সেই ১০ জনের মাধ্যমেই ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ থাকবে।

তাছাড়া এই সিস্টেমে বেশিদিন ভাইরাসকে আটকে রাখাও সম্ভব হবে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

লকডাউনের কোন কোন বিষয়গুলো শিথিল করা যাবে?

সংক্রমণের সংখ্যা কমে এলে লকডাউনের নানা বিধি-নিষেধ শিথিল করা সম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করার ঘটনা ঘটেছে।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের শিক্ষক ডক্টর অ্যাডাম কুচারস্কি বলেন, আমাদের কাছে লকডাউন শিথিল করার অনেকগুলো অপশন আছে। অনেক কিছু পুনরায় খুলে দেয়া যায়।

lockdown in londonলকডাউনে ফাঁকা লন্ডনের রাস্তা

তিনি বলেন, তিনটি বিষয় খেয়াল রেখে লকডাউন শিথিল করা যাবে। কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, মডারেট, সাবস্টেনশিয়াল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তায় নেমে শারীরিক কসরত করা যাবে। ইতোমধ্যে ওয়েলস ও স্পেনে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে।

মডারেট ঝুঁকিতে কিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যেতে পারে। আর সাবস্টেনশিয়াল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্কুল খুলে দেয়া যেতে পারে।

কখন লকডাউনের বিধি-নিষেধ সব চলে যাবে?

সর্বোচ্চ সংক্রমণের পর্যায় অতিক্রম করার পর ঠিক কতদিন লকডাউন অব্যাহত থাকবে এ নিয়ে এখনো একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধীরে ধীরে বিধি-নিষেধগুলো শিথিল করাই ভালো।

যদি হুট করেই সব উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে নতুন করে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।

সামঞ্জস্য আনতে কী করতে হবে?

ভাইরাসটির ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিই মূল অস্ত্র। সেইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা ছাড়া উপায় নেই।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হলে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে কমে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে কিছু লোকের প্রাণহানি ঘটলেও অন্যদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে এবং তা ভাইরাসটির প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।

এ ছাড়া কার্যকর একটি ভ্যাকসিনের আবিষ্কার সব সমস্যার অবসান ঘটাতে পারে। সেই লক্ষ্যেই দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকরা।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.