বোঝার উপায় নেই, অথচ বয়ে বেড়াচ্ছে করোনা

দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬৯১ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এমন কিছু লোক আছে যারা করোনাভাইরাস শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন, অথচ নিজেই জানেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম (বামে), আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর (মাঝে) এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রিদওয়ানউর রহমান (সর্ব ডানে)

দেশে আক্রান্তদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এমন যে, সাধারণভাবে কোনো লক্ষণ নেই। কিন্তু পরীক্ষার পর তাদের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। আর উপসর্গহীন এই করোনা রোগীদের সবচেয়ে ভয়ংকর মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যাদের লক্ষণ নেই তারা করোনা পরিস্থিতিকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছেন। এক্ষেত্রে বেশি বেশি পরীক্ষা, শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমনই একজন হলেন- রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড) হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক তাহমিদ জামান। রুমমেটের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তিনিও কোভিড-১৯ টেস্ট করান। তারও ফলাফল পজিটিভ আসে, যদিও কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি তার।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে সাধারণ যেসব লক্ষণ দেখা যায়, যেমন- জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলব্যথা- এগুলোর কিছুই তার ছিল না।

দেশের মোট আক্রান্তের একটি বড় অংশই এমন উপসর্গহীন। সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা আইইডিসিআরের তথ্যমতে, দেশে এমন উপসর্গহীন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। সেই হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লক্ষণ বা উপসর্গবিহীন করোনা রোগীই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উপসর্গহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি।

এ ব্যাপারে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলছেন, যেহেতু লক্ষণ নেই, আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজেও জানেন না যে তিনি করোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যখন কথা বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাস নেন তার মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে। কিংবা উনি যখন কিছু স্পর্শ করেন সেখানে করোনাভাইরাস থাকতে পারে এবং তার মাধ্যমে অন্যের শরীরে ছড়াতে পারে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রিদওয়ানউর রহমান এ ব্যাপারে বলছেন, এই লক্ষণহীন ইনফেকশনের কারণে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা হলো- আমরা চাইলেও তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। তারা যদি সমাজে রোগ ছড়াতে তাকে, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হয়ে যাবে।

তবে বেশি বেশি পরীক্ষার মাধ্যমে উপসর্গহীন এসব রোগীকে খুঁজে বের করে চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন তারা।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলছেন, একজন যখন শনাক্ত হবে তখন তার সংস্পর্শে আসাদের পরীক্ষা করতে হবে। যদি এ রকম কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে আশপাশের লোকদের টেস্ট করাতে হবে। সেখানে কেউ সংক্রমিত থাকলে ধরা পড়বে।

এ ব্যাপারে ডা. এ এস এম আলমগীর বলছেন, এটার সহসা কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। কারণ আপনি তো লক্ষ-কোটি লোককে টেস্ট করাতে পারবেন না। এ জন্য আমরা যেটা বলি যে, আপনি যখন পাবলিক প্লেসে যান তখন মাস্ক পরে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।