কতটুকু বিজ্ঞানসম্মতভাবে শিথিল হচ্ছে লকডাউন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমতে থাকায় শিথিল হতে শুরু করেছে লকডাউন। দেশগুলোর নীতিনির্ধারকরা বৈজ্ঞানিক নিয়মেই লকডাউন শিথিলসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন। কিন্তু লকডাউন শিথিল করা নিয়ে বিজ্ঞান কী বলছে?

লকডাউনে ফাঁকা লন্ডনের রাস্তা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লকডাউন শিথিল করার জন্য শিশুতোষ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি লকডাউনের বিভিন্ন বিধি-নিষেধ তুলে দিয়েছেন। তার মতে, পরিবর্তন ধীরে ধীরে আনতে হবে। কারণ এতে করে ভাইরাসের দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাব দমিয়ে দেয়া যাবে। যদি পুনরায় সংক্রমণ বেড়ে যায় তাহলে সবকিছু আবার লকডাউনে চলে যাবে।

কোমলমতি শিশুরাই কেন আগে স্কুলে যাবে?

বিশ্বের সেসব রাষ্ট্রে লকডাউন শিথিল করে স্কুল খোলার খবর পাওয়া গেছে, সেখানেই ছোটদের স্কুলে আগে পাঠানোর কথা বলে হয়েছে। এর ব্যখ্যাও চাইছেন অনেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আগে স্কুলে ফিরবে। এর কারণ এ বয়সী শিশুরা ভাইরাসে সংক্রমিত হলেও অসুস্থ কম হয়।

এ বয়সী শিক্ষার্থীরা স্কুলের বাইরে অন্যান্য জায়গায় খুব কম যাতায়াত করে। তাদের জীবন স্কুল আর বাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকে। বড় শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এসব প্রযোজ্য হয় না। তারা সমাজের অনেকের সঙ্গেই মেলামেশা করে, যার কারণে ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি থাকে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের প্রত্যক্ষ প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। বড়রা নিজ থেকেই পড়া চালিয়ে যেতে পারে।

লকডাউনে ফাঁকা প্যারিসের আইফেল টাওয়ার এলাকা

বাড়ির বাইরে কেন সর্বোচ্চ একজনের সঙ্গেই দেখা করা যাবে?

থিওরি মোতাবেক বাড়ির বাইরে একসঙ্গে একাধিক মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দ্বিগুণ করে দেয়।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, গণজমায়েত করলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। অপরদিকে, দুইজন সাক্ষাৎ করলে তাদের মধ্যে তিন ফিটের দূরত্ব থাকা অতি সাধারণ বিষয়।

ঘরের বাইরে বেশি সময় থাকা কি যৌক্তিক?

সংক্রমণের মাত্রা কমতে থাকায় বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের বাইরে বের হয়ে হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে এসব কাজ করে যেতে হবে।

জিম ও খেলার মাঠগুলো তাদের জন্য খোলা হয়নি। এর কারণ এসব স্থানে সামাজিক দূরত্ব অবলম্বন করা যায় না।

দুইজন খেলা যায় এমন ইনডোর গেমগুলো খেলার বৈধতা দিয়েছে সরকারগুলো।

মুখ ঢেকে চলার নিয়ম কেন পরিবর্তিত হয়ে গেল?

এতদিন বিভিন্ন সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, সংক্রমিত রোগীর কাছে গেলেই কেবল মাস্ক বা মুখাবরণ ব্যবহার করতে।

কিন্তু লকডাউন শিথিল করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকার নাগরিকদের বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে।

এর কারণ হতে পারে, মানুষ দৈনন্দিন কাজকর্মে ফিরে গেলে গণপরিবহনে ভিড় আবার বাড়তে থাকবে। সেখানে অনেক সময় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হবে না। অনেকেই আছেন, যাদের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। তারা যদি মাস্ক ব্যবহার করে তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব হবে।

লকডাউনে ফাঁকা মাদ্রিদ

একেক দেশ একেক উপায় অবলম্বন করছে কেন?

সংক্রমণের সংখ্যা কমে এলে লকডাউনের নানা বিধি-নিষেধ শিথিল করা সম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করার ঘটনা ঘটেছে।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের শিক্ষক ডক্টর অ্যাডাম কুচারস্কি বলেন, আমাদের কাছে লকডাউন শিথিল করার অনেকগুলো অপশন আছে। অনেক কিছু পুনরায় খুলে দেয়া যায়।

তিনি বলেন, তিনটি বিষয় খেয়াল রেখে লকডাউন শিথিল করা যাবে। কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, মডারেট, সাবস্টেনশিয়াল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তায় নেমে শারীরিক কসরত করা যাবে। ইতোমধ্যে ওয়েলস ও স্পেনে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে।

মডারেট ঝুঁকিতে কিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যেতে পারে। আর সাবস্টেনশিয়াল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্কুল খুলে দেয়া যেতে পারে।

একেক দেশে দেখা যাচ্ছে একেক রকম পরিস্থিতি। যার কারণে সে পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করেই সরকারগুলো ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ কারণেই দেশগুলোর নেয়া পদক্ষেপ মিলছে না।