আপনি পড়ছেন

হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন ওষুধ সেবনে না কি করোনাভাইরাস দূর হয়ে যাবে। এ জন্য নিজেও নিয়মিত সেবন করছেন বলে দাবি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এটি সেবনকারিদের মৃত্যুর হার বেশি।

hydroxychloroquine doesnt cure coronavirus

বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলেই করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা হচ্ছিলো। যদিও এটি সেবনে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া যাবে এ রকম কোনো সর্বসম্মতি নেই। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং এর আগের সংস্করণ ক্লোরোকুইনের উপর চালানো এক সমীক্ষা শেষে বিশেষজ্ঞরা একটি ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে এনেছেন।

গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন যে, আরো বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন সেবন করানো যাবে না।

হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন দীর্ঘদিন ধরে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এটি যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধেও সক্ষম তার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই। তারপরও বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ব্যবস্থাপত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন উল্লেখ করেছেন। হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন হৃদযন্ত্রের জটিলতা তৈরি করে, এই বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত পোষণ করেছেন।

ফ্রান্সের চিকিৎসক দিদিয়ের রাউল্ট দাবি করেছিলেন যে লা তিমোনে হাসপাতালে তিনি হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন প্রয়োগ করে অনেক রোগিকে সুস্থ করে তুলেছেন। এরপরও মূলত বিশ্বজুড়ে এই ওষুধের ব্যবহার বেড়ে যায়। সাথে সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দাবি করেন যে হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন করোনাভাইরাস সারায় এবং তিনি নিজেও সেবন করছেন বলে দাবি করেন।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইনের কার্যকরিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে। পরে এটি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।

ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগিদের ক্ষেত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন নিরাপদ বলে প্রমাণিত। কিন্তু কোভিড-১৯ সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। গবেষকরা বিশ্বজুড়ে ৬৭১টি হাসপাতালের এমন ৯৬ হাজার রোগির পরিস্থিতি বিবেচনা করে গবেষণা করেছেন, যাদেরকে ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ১৪ এপ্রিল ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইনের অথবা ক্লোরাকুইন অ্যাজিথ্রোমাইসিন বা এ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া সেবন করানো হয়েছিলো।

গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে, যারা হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইনের অথবা ক্লোরাকুইন সেবন করেছে, তাদের মৃত্যুহার যারা সেবন করেনি তাদের তুলনায় বেশি। হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন অথবা ক্লোরাকুইনের যে কোনো একটি সেবন করা রোগিদের প্রতি ছয়জনের একজন মারা গেছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইনের অথবা ক্লোরাকুইন এবং কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা রোগিদের প্রতি পাঁচজনের একজন মারা গেছেন আর হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইনের সাথে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক রোগিদের প্রতি চারজনের একজন মারা গেছেন। আর যারা হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন অথবা ক্লোরাকুইনের কোনোটিই সেবন করেননি, তাদের মধ্যে প্রতি ১১ জনের একজন মারা গেছেন।

এই পরিসংখ্যান শতভাগ তুলনাযোগ্য নয়। কারণ এটি গবেষণার উদ্দেশ্যে কোনো ট্রায়াল ছিলো না; বরং পরিস্থিতির পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। ফলে বয়স, লিঙ্গ, অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং রোগের মাত্রা এক রোগির তুলনায় অন্য রোগির ভিন্ন ছিলো এবং এই বিষয়ক পরিসংখ্যান তুলনাযোগ্য নয়। তবে গবেষণাটির আমেরিকান অংশগ্রহণকারি বলেছেন, ভিন্নভাবে আলাদা করলেও হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন অথবা ক্লোরাকুইন সেবনকারিদের মৃত্যুহার বেশিই হবে।

গবেষকরা দাবি করেছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন অথবা ক্লোরাকুইনের ব্যবহারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগির হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতাও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইনের সাথে যাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে, তাদের সমস্যা ছিলো বেশি প্রকট।

গবেষণাটির প্রধান অধ্যাপক মানদ্বিপ আর মেহরা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ব্রিগ্যাম অ্যান্ড ওমেন’স হাসপাতালের নির্বাহী পরিচাল। তিনি বলেন, “হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন অথবা ক্লোরাকুইন যে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় কাজ করে না, সে বিষয়ে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গবেষণা। আমাদের গবেষণা এটা প্রমাণ করেছে যে, হাইড্রোক্সিক্লোরাকুইন অথবা ক্লোরাকুইন হৃদযন্ত্রের জটিলতা ও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। আমরা মনে করি, ক্লিনিকাল ট্রায়াল ব্যতিত এই ওষুধ কোনোভাবেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগিকে দেওয়া উচিত নয়।”

ইউনিভার্সিই অব লিডসের স্কুল অব মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডক্টর স্টিভেন গ্রিফিন বলেন, “এই গবেষণাটি কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা বিষয়ে একটি অসাধারণ কাজ। এই ওষুধ কোনোভাবেই চিকিৎসার জন্য সেবন করানো উচিত নয়।”

গবেষণাপত্রটি দেখতে ক্লিক করুন।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.