বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী নাসিম

রাজনৈতিক পরিবারেই জন্ম ও বেড়ে উঠেন প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনি তার নিজের এলাকায় পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ নাসিম ছাত্রজীবনে বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ৮০ এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তখন তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সব ধরনের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক।

মোহাম্মদ নাসিম

স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নাসিম ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং ৭৫-এ জেলখানায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকার জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনসুর আলী। স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন মোহাম্মদ নাসিম।

সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ নাসিম। শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং মাতা আমেনা মনসুরের ছেলে নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

জাতীয় নেতা ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিভিন্ন সরকারের সময় জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হন। পাকিস্তানের স্বৈরশাসন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন প্রয়াত এ নেতা। অংশ নেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীন বাংলাদেশেও সামরিক ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিনি বার বার রাজপথে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন।

মোহাম্মদ নাসিম ১৯৮৬ প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১, ২০১৪, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের দায়িত্ব পান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রও ছিলেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এ সরকারে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তখন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

শুধু রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন এ জাতীয় নেতা। পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশকিছু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন মোহাম্মদ নাসিম।

মোহাম্মদ নাসিমের স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। তাদের তিন জন সন্তান রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তানবির শাকিল জয় মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে।

বিগত ৩০-৩৫ বছর আগে থেকেই তিনি জাতীয় নেতা। দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে তিনি অসংখ্য নেতাকর্মী তৈরি করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মোহাম্মদ নাসিম সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদে বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।