আইসিইউর জন্য হাহাকার, অতঃপর এম্বুলেন্সে মৃত্যু!

দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের কত তীব্র সঙ্কট, নিজের জীবন দিয়ে তা দেখিয়ে গেলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল হাই। একটি আইসিইউ বেডের জন্য ৩ দিন ধরে মুমূর্ষু আব্দুল হাইকে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানরা ঢাকা শহর চষে বেড়িয়েছেন, কোনো বেড খালি পাননি। ৪ দিন পর যখন পেলেন তখন আইসিইউতে ঢোকানোর প্রয়োজন হয়নি আব্দুল হাইকে, তার আগেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আব্দুল হাইয়ের স্ত্রীর আর্তচিৎকারে চারপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। একটি আইসিইউ বেডের অভাবে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, এটা বলতে গিয়ে বারবার মূর্চা যান তিনি। নিজেদের চোখের সামনে ছটফট করতে করতে বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন, মেনে নিতে পারছেন না সন্তানরাও।

আব্দুল হাই (৫৫) সুপ্রিম কোর্টের বারে কাজ করতেন। সপ্তাহখানেক আগে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। করোনার অন্যান্য উপসর্গও ছিল তার শরীরে। ৯ জুন তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে। কিন্তু শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়তেই থাকে। অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও হাসপাতালে সেটি পাওয়া যাচ্ছিল না। সবগুলো অক্সিজেন কোনো না কোনো রোগীর মুখে লাগানো।

ওদিকে আব্দুল হাইয়ের শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে রেফার করেন। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজে আইসিইউ বেডও খালি নেই। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আব্দুল হাইকে এম্বুলেন্সে তুলে বেরিয়ে পড়েন স্ত্রী সন্তানরা, যদি কোনো হাসপাতালে একটা বেড মেলে! এভাবে প্রায় ৩ দিন ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে অনুরোধ করলেও পাওয়া যায়নি সোনার হরিন হয়ে পড়া আইসিইউ বেড।

প্রাণপণ চেষ্টার পর অবশেষে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা হল। কিন্তু ততক্ষণে আর নেই আইনজীবী আব্দুল হাই। আইসিইউতে প্রবেশ করোনার আগেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।