যেন একাই একশ বেক্সিমকো ফার্মা!

দেশের পুঁজিবাজারে খরা চলছে বেশ কিছু সময় আগে থেকেই। এর মধ্যেই ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতো আবির্ভূত হয় করোনার মহামারি। দেশে সাধারণ ছুটিতে অন্য সবকিছুর মতো বন্ধ থাকে শেয়ারবাজারও। সম্প্রতি অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত সবকিছু খুলে দেওয়া হয়। সেই সূত্রে খুলে যায় পুঁজিবাজারও। কিন্তু লেনদেন শুরু হলেও শেয়ারবাজারের খরা এখনো কাটেনি।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের লোগো

তবে লেনদেনের এই খরার বাজারে একাই আধিপত্য করছে বেক্সিমকো ফার্মা। এ যেন একই একশ! শেয়ারবাজারের প্রতি কার্যদিবসেই লেনদেনের বড় অংশজুড়ে থাকছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

ডিএসই (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজারে যে লেনদেন হয়েছে, তাতে শীর্ষে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ প্রতিষ্ঠানটি। লেনদেনের প্রায় ৯ শতাংশই কোম্পানিটির দখলে ছিল। তার আগের সপ্তাহেও মোট লেনদেনের ৯ শতাংশের বেশি বেক্সিমকো ফার্মার দখলে ছিল।

ডিএসইর গত সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহজুড়ে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহেও মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ ছিল কোম্পানিটির শেয়ার। এ সময়ে কোম্পানিটির মোট শেয়ার লেনদেন হয় ৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন কম হয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড

অবশ্য সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমলেও বেক্সিমকো ফার্মা তাদের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোম্পানিটির সঙ্গে লেনদেনে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এতে পুঁজিবাজারে লেনদেনের খরা তো কাটছেই না, বিপরীতে লেনদেন কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের একই দিন শেষে যা ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৭৮ কোটি টাকা।

এদিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে যা বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। এ ছাড়া ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমেছে ১ দশমিক ২৩ পয়েন্ট। অথচ আগের সপ্তাহে সূচক বেড়েছিল ৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। অন্যদিকে, ডিএসই-৩০ কমেছে ৬ দশমিক ৩২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে যা বেড়েছিল ১০ দশমিক ২৬ পয়েন্ট।

সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে লেনদেনের দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে ছিল লিন্ডে বাংলাদেশ। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার। যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৯ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস।

লেনদেনের শীর্ষ ১০-এ থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো যথাক্রমে ন্যাশনাল ব্যাংক, রেকিট বেনকিজার, বাংলাদেশ সবমেরিন কেবলস, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো), সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, এক্সিম ব্যাংক এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

ডিএসইর গত সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রত্যেক কার্যদিবসে গড়ে ৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন ছিল ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে ৩ কোটি ১ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ গড় লেনদেন কম হয়েছে।

অন্যদিকে, ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে হয় ৩৫৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার লেনদেন। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে মোট লেনদেন ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে।

আগের সপ্তাহগুলোর মতো গত সপ্তাহেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ সময়ে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বৃদ্ধির চেয়ে কমেছে বেশি প্রতিষ্ঠানের। আলোচিত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৯টির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৩৯টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

এর ফলে মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো হারিয়েছেন।