ব্যাংকে বেতন না কমিয়ে সংকট মোকাবেলায় ৫ পরামর্শ

চলমান করোনা সংকটের কারণে সম্প্রতি কিছু বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের ফলে কর্মকর্তারা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, যার প্রভাব প্রথমত ব্যাংক সেক্টরে এবং সার্বিকভাবে পুরো অর্থনীতির ওপর পড়বে। তাছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত অমানবিকও। তাই বেতন বেতন না কমিয়ে ব্যয় কমানোর পাশাপাশি আয় বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।

বিডব্লিউএবি- এর লোগো

ব্যাংকারদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (বিডব্লিউএবি) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলার পাশাপাশি সংকট মোকাবেলায় পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে।

শনিবার সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট কাজী মো. শফিকুর রহমান বলেন, চলমান করোনা সংকটের কারণে ইতোমধ্যে দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এবি ব্যাংক লিমিটেড এবং এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড তাদের ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর ঘোষণা নিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক মনে করে, করোনা সংকট মোকাবেলার অংশ হিসেবে কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানো কোনো সমাধান হতে পারে না।

তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর এই সিদ্ধান্ত তাদের হতাশাগ্রস্ত করবে এবং কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংক সেক্টরে। শুধু করোনা নয়, বরং যেকোনো আর্থিক সংকট মোকাবেলায় কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, যাতে তারা নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে ব্যাংকের উন্নয়ন ও গতিশীলতায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করে বিডব্লিউএবি।

বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে সরকারি ছুটিতেও ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য সম্মুখযোদ্ধাদের মতো ব্যাংক কর্মকর্তারাও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে এসেছেন। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ২০ ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন। সেইসঙ্গে আনুমানিক ২০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতান্তই অমানবিক।

বিডব্লিউএবি আরো মনে করে, কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর পদক্ষেপ অন্যান্য সেক্টরকেও প্রভাবিত করতে পারে এবং যার বিরূপ প্রভাব গোটা অর্থনীতিতে পড়তে পারে।

এই অবস্থায় কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা না কমিয়ে বরং বাংকগুলোর উচিত অন্যান্য সম্ভাব্য খাতে ব্যয় কমানো এবং আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া। এক্ষেত্রে পাঁচটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। সেগুলো হলো-

# সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর যে করপোরেট ট্যাক্স আরোপ করেছে তা কমানোর ব্যাপারে আবেদন করা।

# বাংলাদেশ ব্যাংকের কনজ্যুমার লোনের (হোম লোন, কার লোন ইত্যাদি) ওপর লোনের সুদহার কমপক্ষে ২ শতাংশ বাড়ানো (যেহেতু উক্ত লোনগুলোর তদারকি খরচ বেশি)।

# বাংলাদেশ ব্যাংকের আনসিকিউরড পার্সোনাল লোন এবং ক্রেডিট কার্ডের শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে জেনারেল প্রভিশন ২ শতাংশ নির্ধারণ করা।

# কোনো ব্যাংকের লোকসান হলে এবং ডিভিডেন্ট করা সম্ভব না হলে পরবর্তী অন্তত ২ বছর ওই ব্যাংকের শেয়ারকে জেড ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত না করা।

# তদুপরি পরিচালনা ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।