চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে বিপাকে ভারতীয়রা

লাদাখ সীমান্তে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল। তারই এক পর্যায়ে সপ্তাহ খানেক আগে দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা মৃত্যু হয় বলে দাবি করা হয়। খোদ ভারতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি স্বীকার করা হয়। এমনকি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনা হত্যার বদলা নেওয়ার ঘোষণা দেন।

সেনা নিহতের প্রতিবাদে ভারতীয়দের বিক্ষোভ

চীনা বাহিনীর হামলায় সেনা নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় ভারতীয়রা। এর বদলা নেওয়ার দাবি উঠে। চীনের পতাকা ও দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। সেইসঙ্গে দাবি উঠে চীনা পণ্য বর্জনের। বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়।

কিন্তু এই ঘোষণায় এখন নিজেরাই বিপাকে পড়েছে ভারতীয়রা। দেশটিতে পণ্যের, বিশেষ করে ওষুধ কাঁচামালের দাম হু হু করে বাড়ছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

গত ১৫ জুন পূর্ব লাদাখে ওই সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চীনের জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয়। সেইসঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ছবি পোড়ানো হয়। সেইসঙ্গে প্রতিশোধের কথা বলা হয় বিভিন্ন মহল থেকে। দাবি উঠে চীনা পণ্য বয়কটের। হিন্দুত্ববাদী ও জাতীয়বাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে চীনা পণ্য বয়কটের প্রচারণা চালানো হয়।

সেনা নিহতের প্রতিবাদে ভারতীয়দের বিক্ষোভ

ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, পণ্য বর্জনের ওই ঘোষণার পর অন্য পণ্যের পাশাপাশি ওষুধের কাঁচামালের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের শতাধিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয় রয়েছে উত্তরাখণ্ডে। সেখানকার একটি শীর্ষ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জানান, গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের মধ্যকার ওই ঘটনার পর চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। এর ফলে ওষুধের কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাতারাতি ৩০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলছেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির অজুহাত দিচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির চেয়েও বড় কথা হলো- অনৈতিকভাবে দাম বাড়িয়ে তারা বেশি অর্থ কামানোর জন্যই এ কাজ করছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, ওষুধ শিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামালই চীন থেকে আমদানি করে ভারত। কারণ ইউরোপ-আমেরিকা থেকে এই কাঁচামাল আনতে গেলে দ্বিগুণ খরচ হয়।

হরিদ্বারের এক ওষুধ উৎপাদনকারী স্পষ্ট বলেছেন, ভারতের জন্য চীনা পণ্য পুরোপুরি বয়কট করা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ দেশটিতে উৎপাদিত বেশির ভাগ ওষুধের উপাদান চীন থেকেই আনতে হয়। এমনকি সাধারণ ওষুধ প্যারাসিটামল উৎপাদন করতে হলেও এর কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।