উপসর্গহীনরা কি করোনা ছড়ায়, ৫টি জরুরি প্রশ্নের উত্তর

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফির্নিয়ার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মনিকা গান্ধী বলেন, স্ক্রিনিং করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে রেখে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, যাদের মধ্যে ভাইরাস থাকার পরও আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হয়নি তাদের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস।

তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে এক নারীর

লক্ষণহীন মানুষ বলতে কি বোঝায়?

প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই মরণঘাতী এই ভাইরাসটি মানবদেহে বিভিন্ন উপসর্গ দেখিয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ এতে আক্রান্ত হওয়ার পরও কোনো লক্ষণ দেখায়নি। তাদের লক্ষণহীন মানুষ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।

সাধারণত একজন মানুষ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। একে বলা প্রাক-লক্ষণ ধাপ।

প্রতীকী ছবি

গবেষকরা বলছেন, এই প্রাক-লক্ষণের ধাপেই ভাইরাসটি ড্রপলেটের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। যাদের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়নি তাদের থেকেও এই সময়ে ছড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণহীন মানুষের সংখ্যা আসলে কত?

এ সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। একেক গবেষণায় একেক সংখ্যা বলা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কো স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের এক হিসাবে দেখা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ শতাংশের কোনো লক্ষণ ছিল না। আক্রান্ত হওয়ার দ্বিতীয় সপ্তাহে টেস্টে পজিটিভ আসার পরও তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা দেয়নি।

গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এ সংক্রান্ত গবেষণা হয়েছে। গড়ে সেখানে ৪০-৪৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও কোনো লক্ষণ দেখা দেয়বি। তাই বলা যায়, একটি রাষ্ট্রে মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ শতাংশ রোগীর কোনো লক্ষণ থাকে না।

এদের মাধ্যমে কীভাবে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

করোনাভাইরাস দেহে প্রবেশের পর প্রাক-লক্ষণ ধাপ নাক ও গলায় অবস্থান করে। এর কারণে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। যাদের দেহে কোনো লক্ষণ নেই, তাদের দেহেও ভাইরাসটি একই অবস্থানে থাকে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, প্রাক-লক্ষণ ধাপে থাকা মানুষের থেকে ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। হাঁচি-কাশি, থুতু কিংবা খুব কাছে গেলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণহীন মানুষদের থেকে কী পরিমাণ ভাইরাস ছড়াচ্ছে?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সঠিক কিছু বলতে পারছেন না যে, লক্ষণহীন মানুষদের থেকে ভাইরাসটি কী পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে কিছু তথ্য প্রমাণ করে যে, বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সৃষ্টির অন্যতম কারণ লক্ষণ না থাকা মানুষের থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফির্নিয়ার এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সংস্পর্শে না আসা পরও সংক্রমিত হয়েছে। তাদের দেহে ঠিক কীভাবে ভাইরাসটি এসেছে তা খতিয়ে দেখার পর জানা গেল, অনেকের দেহেই ভাইরাসটি থাকার পরও কোনো লক্ষণ দেখায়নি। যার কারণে তাদের থেকে সহজেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে।

লক্ষণহীন মানুষদের থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া থামাতে আমরা কী করতে পারি?

স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার চেয়ে ভালো কোনো উপায় আর কিছুই হতে পারে না। লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব হয়তো সবসময় কার্যকর রাখা সম্ভব হবে না। কারণ দীর্ঘ সময় এই প্রক্রিয়া চালু রাখা হলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হবে।

এই ব্যবস্থা তখন কার্যকর ছিল যখন আমরা জানতাম না ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আমাদের ঠিক কী করতে হবে। এখন আমাদের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সমাজে চলাচল করতে হবে। মাস্ক পরিধান এক্ষেত্রে বেশ কার্যকর প্রমাণ হয়েছে। তবে সব মাস্কই যে কার্যকর বিষয়টি এমন না। সেইসঙ্গে হাত পরিষ্কার রাখা ও নাক মুখে হাত না দেয়ার অভ্যাস তৈরি করাও হবে কার্যকর একটি উপায়।