মধ্যবিত্তের সামনে ‘লজ্জা’র দেয়াল

করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্তরা। ব্যবসা বন্ধ, চাকরি থাকলে সেটা চলে গেছে। চাকরি যদি থেকেও থাকে তাহলে বেতন বন্ধ গত দুই-তিন মাস। বিশেষকরে রাজধানীর মধ্যবিত্তরা এক দুঃসহ অর্থসঙ্কটের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। অর্থসঙ্কট তো উচ্চবিত্তদের কখনোই ছুঁতে পারে না। ঠিক উল্টো পাশে অবস্থান করা নিম্নবিত্তরা চেয়েচিন্তে হলেও দুবেলা খেতে পারছেন। কিন্তু মধ্যবিত্তের তো সেই সুযোগ নেই, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ‘লজ্জা’র এক অলঙ্ঘনীয় দেয়াল।

রোজগার বন্ধ, কিন্তু খাড়া আছে বাসা ভাড়া, বিদ্যুত বিল, গ্যাস বিলসহ সব কিছু। ওদিকে বাঁচার জন্য খেতে তো হবেই। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে বাবা হয়তো বিক্রি করে দিয়েছেন শখের হাতঘড়িটা। মা বিক্রি করেছেন গহনা। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? অনেকেই ভাড়ার বদলে ঘরের ফার্নিচার বাড়িওয়ালাকে বুঝিয়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কিন্তু সবার পক্ষে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই অব্যক্ত কান্নাগুলো গুমরে মরছে ভেতরেই।

গবেষকরা বলছেন, দেশে কমবেশি ২৫ শতাংশ মানুষ উচ্চবিত্ত। করোনাভাইরাস সবকিছু স্থবির করে দিলেও এদের কোনো সংকট নেই। ৪০ শতাংশ আছেন গরীব, এরা উচ্চবিত্ত ২৫ শতাংশের সহযোগীতা আর সরকারের ত্রাণ পেয়ে দুই বেলা খেতে পারছেন। কিন্তু বিপাকে পড়েছেন ৩৫ শতাংশ মধ্যবিত্ত। তাদের জন্য না আছে সাহায্য, না আছে রোজগারের ব্যবস্থা।

মধ্যবিত্ত সমাজ যে অদৃশ্য ‘আত্মমর্যাদা’ ধারণ করে সেটার কারণেই সে অনেক কিছু করতে পারে না। চাইলেই ফুটপাতে যেমন সবজি বিক্রি করতে বসতে পারে না তেমনি হাত পাততে পারে কারো কাছে। তাছাড়া এই দুঃসময়ে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই সঙ্কটে। তাই চাইলেও কাউকে সঙ্কটের কথা বলা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘কাউকে কিছু না বলতে পারা’ এই মধ্যবিত্তদের জন্য সরকারের কিছু একটা করা উচিত এখনই।