‘পালিয়ে যাওয়া’ সুমন ফের মিটফোর্ডে, কথা বলায় ‘নিষেধাজ্ঞা’

রাজধানীর সদরঘাট সংলগ্ন শ্যামবাজার এলাকায় সম্প্রতি বুড়িগঙ্গা নদীতের ডুবে যায় ‘ময়ূর-২’ নামের একটি লঞ্চ। এ দুর্ঘটনায় মোট ৩৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে 'অলৌকিভাবে' বেঁচে যান সুমন ব্যাপারী নামের এক ব্যক্তি। লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর তাকে ঘটনাস্থলে নদী থেকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপর থেকেই মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি তিনি।

লঞ্চ দুর্ঘটনায় উদ্ধার হওয়া সুমন ব্যাপারী- ফাইল ছবি

এ ঘটনার পর সুমন ব্যাপারীর এভাবে 'অলৌকিকভাবে' বেঁচে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। তিনি নিজেও দীর্ঘ সময় পানির নিচে বেঁচে থাকা নিয়ে একেকবার একেক রকম তথ্য দিয়েছেন। যার ফলে তার এই বেঁচে যাওয়া নিয়ে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়েছে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, সুমন ব্যাপারী দুই দিন আগে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন। হাসপাতালের একাধিক সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তবে হাসপাতালে সুমনের সঙ্গে থাকা তার ভাতিজা ফয়সাল আহমেদ শাকিব বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তারা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাননি। শুধু হাসপাতালের ভবন পরিবর্তন করেছেন।

গতকাল শনিবার হাসপতালের বিভিন্ন অংশে সুমনকে শনাক্তও করা হয়েছে। তবে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আবদুল্লাপুর ইউনিয়নের তার গ্রামে গিয়ে জানা যায় ভিন্ন ঘটনা।

লঞ্চ দুর্ঘটনায় উদ্ধার হওয়া সুমন ব্যাপারী- ফাইল ছবি

সুমনের বড় ভাই শাহজাহানসহ ও আবদুল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল রহিম ব্যাপারীসহ স্থানীয়রা বলছেন, গত বুধবার সুমন সত্যিই গ্রামে ফিরেছিলেন। এমনকি বৃহস্পতিবার তিনি সারাদিন গ্রামেই ছিলেন। তবে শুক্রবার এক 'জরুরি ফোন কল' পেয়ে তিনি ফের ঢাকায় ফিরে যান এবং হাসপাতালে ভর্তি হন।

তবে কে বা কারা সুমনকে ফোন করেছিল তা জানা যায়নি। এদিকে সুমনের সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলতে গেলে জানা যায়, গণমাধ্যমের সঙ্গে তার কথা বলায় 'নিষেধাজ্ঞা' দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইসহাক মজুমদার বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে সুমনের কথা বলা সীমিত করা হয়েছে। কোনো সাংবাদিক তার সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। এমনকি তার চিকিৎসার বিষয়ে ডাক্তারাও গণমাধমের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। এই নির্দেশনা 'উচ্চমহল' থেকে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে লঞ্চডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন সুমন ব্যাপারী। গত বৃহস্পতিবার কমিটির প্রধান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, সুমনের সঙ্গে ৩০ মিনিট কথা হয়েছে। তিনি একেকবার একেক কথা বলছেন।

‘একবার বলছেন, লঞ্চ ডুবে যাওয়ার সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন-কিছুই মনে নেই। উদ্ধারের পর সবকিছু জানতে পারেন। আবার কিছুক্ষণ পর তিনিই বলছেন, একটা অন্ধকার জায়গায় হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়েছিলেন। তার বক্তব্যে আসলে কোনো কিছু স্পষ্ট হয়নি। বিষয়টি আমরা আরো খতিয়ে দেখবো,’ বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান রফিকুল ইসলাম।