ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

সাগর ও নদীতে ৬৫ দিন মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞা পালন শেষে আবার শুরু হয়েছে ইলিশ আহরণ। ফলে বরগুনার নদী ও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ। পাশাপাশি আবহাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ আহরণ হবে বলে আশা করছেন জেলার জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী, সাধারণ ক্রেতাসহ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

ইলিশ- পুরান ছবি

তবে মাত্র কিছুদিন আগে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় এবং মাছের আকার বড় হওয়ায় জেলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও স্থানীয় বাজারগুলোতে এখনো ইলিশের দাম চড়া। মাছ ধরা অব্যাহত থাকলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে দাম কমে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

জেলেরা জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই থেকে ফের সাগর ও নদীতে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যাচ্ছেন তারা। গত এক সপ্তাহে তাদের জালে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে। প্রতিটি ইলিশের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে পৌনে দুই কেজি পর্যন্ত। সাগর ও নদীতে মাছ ধরা অব্যহত রয়েছে। জেলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও স্থানীয় বাজারগুলোতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, মৌসুমী বায়ু সময়মতো সক্রিয় হওয়ায় এবার ইলিশ আহরণের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে।

ইলিশ- পুরান ছবি

দেশের মোট ইলিশ উৎপাদনের ১৩ শতাংশ বরগুনা জেলা থেকে আহরণ করা হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মৎস্য বন্দর রয়েছে বরগুনার পাথরঘাটায়। এ অবতরণ কেন্দ্র থেকে ইলিশের মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ২শ টন ইলিশ কেনা-বেচা হয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিলো।

পাথরঘাটার বিএফডিসি পাইকারি মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার মো. অলিউল্লাহ বলেন, গত দুই দিনে এ পাইকারি বাজারে জেলেরা ৮০০ গ্রাম থেকে পৌনে দুই কেজি ওজনের প্রচুর পরিমাণ ইলিশ বিক্রি করেছে। তবে মাছের দাম কিছুট চড়া ছিলো। এক কেজির কম ওজনের ইলিশের মন বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ হাজার টাকায়। যেসব ইলিশের ওজন এক কেজির ওপরে সেগুলো বিক্রি হয়েছে প্রতি মন ৪৬ হাজার টাকায়। প্রতিটি ট্রলার থেকে গড়ে ১২-১৪ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে।

গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, গত এক সপ্তাহে এই পাইকারি মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্রে ৯১ হাজার ৭২৪ মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সাগরে ঝড় বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি না হলে, চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণে ইলিশ আহরণ হবে।

পাথরঘাটার স্থানীয় মাছ বাজারগুলো ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, ইলিশের আকার বড় হওয়ায় দাম কিছুটা চড়া। এক কেজি বা তার কম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে। সম্প্রতি পাথারঘাটার স্থানীয় একটি বাজারে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে। সেই মাছটি দাম নেওয়া হয়েছিলো ৫ হাজার ৯০০ টাকা।

পাথারঘাটা বিএফডিসি আড়তদার সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. মারুফ হোসেন বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, প্রতি বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২দিন এবং ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগর বা নদীতে ইলিশ ধরা, পরিবহরন ও বিক্রি বন্ধ থাকে। এছাড়া ১২ অক্টোবর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাসেরও বেশি সময় জাটকা ধরা, পরিবহন ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে।

তিনি আরো বলেন, এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় নদীর পানি অনেকটা দূষণমুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় এবার নদীতে জেলেদের জালও তেমন একটা পড়েনি। ফলে ইলিশের বড় হওয়া, চলাচলের পথ সুগম হওয়ায়সহ সার্বিক আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ব্যপক পরিমাণ ইলিশ আহরণের আশা করা হচ্ছে।