প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে বৈরুত বিস্ফোরণ
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৩৭ জন মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৫ হাজার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। এদিকে ওইদিন সেখানে আসলে কী ঘটেছিল তা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের খুঁজে বের করা হবে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিস্ফোরণের ঠিক আগে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে বৈরুত বন্দরে একটা বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বন্দরে যে বিশাল শস্যের গুদাম আছে, তার পাশে ১২ নম্বর গুদামঘর থেকে সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা গেছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার অল্প পরই গুদামঘরের ছাদে আগুন ধরে যায় এবং প্রথমদিকে একটা বড় বিস্ফোরণ ঘটে। এর পরপরই আতশবাজির মতো ছোট ছোট কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে।
প্রায় ৩০ সেকেন্ড পর একটা বিশাল ও ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আকাশে বিশাল একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা যায়। পুরো শহরেই বিস্ফোরণের ভয়ানক কান ফাটানো তীব্র শব্দ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গেই বন্দরের কাছের বাড়িগুলো মাটিতে মিশে যায় এবং শহরে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।
বিস্ফোরণের ধাক্কায় বন্দর থেকে প্রায় ৯ কি.মি. দূরে অবস্থিত বৈরুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল ভবনের জানলার কাঁচ ভেঙে গেছে। ২০০ কি.মি. দূরে ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাস থেকেও বিস্ফোরণের ভয়ানক শব্দ শোনা গেছে। এই বিস্ফোরণ রিক্টার স্কেলে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পের মত জোরালো ছিল বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের ভূকম্পন বিশেষজ্ঞরা।
বৈরুতের গর্ভনর মারওয়ান আবুদ বলেন, তিন লাখের মতো মানুষ সাময়িকভাবে গৃহহীন হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির সার্বিক পরিমাণ এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার হতে পারে।
বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
লেবানিজ রেড ক্রসের প্রধান জর্জ কেত্তানি বলেন, আমরা চোখের সামনে একটা মহাবিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেছি। সবখানে শুধু নিহত এবং আহত মানুষ।
যেখান থেকে বিস্ফোরণ
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলছেন, বন্দরের একটি গুদামঘরে অনিরাপদভাবে মজুত করে রাখা ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে বিস্ফোরণটি ঘটতে পারে। তারপরও আমরা তদন্ত চালানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। যত দ্রুত সম্ভব কী কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে তা উদঘাটন করা হবে। যাদের গাফিলতিতে এ ঘটনা ঘটেছে এবং যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০১৩ সালে মলডোভিয়ার পতাকাবাহী মালবাহী জাহাজ এমভি রোসাস একই পরিমাণ রাসায়নিক নিয়ে বৈরুত বন্দরে নোঙর করে। জাহাজটি জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিকে যাচ্ছিল। কিন্তু কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়ার কারণে সেটি বৈরুতে নোঙর করে। তখন সেটিকে ওই বন্দর থেকে যাবার অনুমতি দেয়া হয়নি। এর কিছুদিন পর মালিক জাহাজটিকে সেখানে পরিত্যাগ করে চলে যায়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ওই জাহাজের মালামাল ১২ নম্বর গুদামঘরে রাখা হয় এবং সেখান থেকে এগুলো নষ্ট করে ফেলার বা বিক্রি করে দেবার কথা ছিল।
বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যামেনিয়াম নাইট্রেট স্ফটিকের মতো সাদা কঠিন পদার্থ। যা কৃষিকাজে নাইট্রোজেনের উৎস হিসেবে সারে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ একটা রাসায়নিক, যদি তা সঠিকভাবে নিরাপদে গুদামজাত করা হয়। তবে দীর্ঘদিন মজুত রাখলে তা নষ্ট হতে শুরু করে। তখন এই রাসায়নিক বায়ুমণ্ডলের বাষ্প শোষণ করে এবং এটা ক্রমশ পাথরে পরিণত হয়। সেটা এটিকে আরো বিপজ্জনক করে তোলে। কারণ ওই অবস্থায় তাতে যদি কোনোভাবে আগুন ধরে যায় তা খুবই তীব্র ও ভয়াবহ রূপ নেয়।
বিষয়টি নিয়ে লেবাননের শুল্ক বিভাগের মহাপরিচালক বদরি দাহের বলেন, গুদামে মজুত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে বিপদের ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের সতর্কবার্তা এবং সেগুলো সরিয়ে নেবার জন্য তাদের বার বার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করেছে। রাসায়নিকগুলো আবার রপ্তানি করে দেয়ার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্ত সেটা করা হয়নি। কেনো সেটা করা হয়নি, তা এখন বিশেষজ্ঞরা এবং সংশ্লিষ্টরাই নির্ধারণ করবেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.