ফখরুল: খবর শুনেই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন হামলার খবর শুনে বিএনপি প্রধান বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ ওই হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। দলটির সে সময়কার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। এ ছাড়া কয়েক শ মানুষ আহত হয়।

গতকাল শুক্রবার ছিল ইতিহাসের জঘন্যতম ওই হামলার ১৬ বছর পূর্তি। এদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক কর্মসূচিতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে তিনি ওই হামলার জন্য তৎকালীন চার-দলীয় জোট সরকার তথা সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দায়ী করেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরের দৃশ্য

তিনি বলেন, জোট সরকারের অন্যায়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আমরা সমাবেশ ও র‌্যালি করতে যাই। কিন্তু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সেই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। আমাকে হত্যা করাই ছিল তাদের হামলার প্রধান টার্গেট।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা ঘটনা ঘটার আগে খালেদা জিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং বক্তব্য রেখেছিলেন। সেগুলোই তা প্রমাণ করে। যেমন- কোটালীপাড়ায় বোমা হামলার আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ আগামী ১০০ বছর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২১ আগস্ট বোমা হামলার আগে তিনি বলেছিলেন, কোনো দিন বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারবেন না শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার এসব বক্তব্য প্রমাণ করে যে, ওই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে তারা জড়িত। তাছাড়া আলামত নষ্ট করাও এক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রমাণ।

প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের জবাবে আজ শনিরবার এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মনগড়া ও ভিত্তিহীন, সেইসঙ্গে অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বহীন, বানোয়াট, অপরিণামদর্শী ও অসত্য বক্তব্যের আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, নিঃসন্দেহে ওই দিনের ঘটনা ভয়াবহ। হামলায় হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও মন্ত্রিসভা এই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় নিন্দা এবং নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান। সেইসঙ্গে দোষীদের বিচারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই সদস্যদের আনা হয় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্ভিস দিতে। জাতীয় সংসদে বিচারের যে দাবি উত্থাপিত হয়, সে অনুযায়ী তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়, যার নেতৃত্ব দেন সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ওই দিন হামলার খবর শোনার সাথে সাথেই হতবাক ও বিচলিত হয়ে পড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন তিনি। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান এবং বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকীকে দেখতে সিএমএইচে যান।