আগে ভ্যাকসিন পেতে পথ খোলা রেখেছে সরকার

দিন যত যাচ্ছে ক্রমশ মরণব্যাধী করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা ততই উজ্জ্বল হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাতটি ভ্যাকসিন হিউম্যান ট্রায়ালের তৃতীয় বা চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি ভ্যাকসিন চীনের, একটি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও দুটি যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও ফাইজারের। এ ছাড়া অপরটি হলো রাশিয়ার। যদিও সেটি এরই মধ্যে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে রুশ সরকার।

সম্ভাব্য ভ্যাকসিন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১৭০টির বেশি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম ধাপে রয়েছে ২৫টি, দ্বিতীয় ধাপে ১৫টি ভ্যাকসিন এবং বাকি ১৩৯টি এখনো ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।

এদিকে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন আগে পেতে পরীক্ষার শেষ ধাপে থাকা সবগুলো কোম্পানির সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। সে জন্য ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার সবগুলো পথই খোলা রাখা হয়েছে। কারণ কোন ভ্যাকসিনটি যে আসলে কার্যকর হবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত নয়। তাই বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ভ্যাকসিন পেতে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমতি দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। কারণ চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়ায় এখন কয়েক হাজার লোক এটা পাবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা সম্পর্কেও বোঝা যাবে। এখন সরকারের উচিত, আরো যে সব দেশ ট্রায়াল দিতে চায় তাদেরও অনুমোদন দেয়া।

সম্ভাব্য ভ্যাকসিন

এতে করে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। তখন সবচেয়ে ভালোটাই দেশের মানুষের জন্য নেয়া যাবে। পাশাপাশি এটা যেন জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে, যোগ করেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ভ্যাকসিন পেতে সরকার সব পথই খোলা রেখেছে। সেই প্রেক্ষিতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যারাই দিতে চাচ্ছে তাদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। এগুলো সফল হলে দেশের জন্য ভালো। তখন ভ্যাকসিনগুলো বিনা পয়সায় বা কম মূল্যেও পাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদন ও তা সরবরাহের জন্য গত ২৮ আগস্ট ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। ভারতের ওই কোম্পানিতে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হবে। তাই সেখানে বিনিয়োগ করবে বেক্সিমকো।

প্রতিষ্ঠানটির ভাইস-চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও এখন অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আসবে। ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে এগুলো বাজারে ছাড়ার কথা রয়েছে।