‘বাঁশের সাঁকো’ সংস্কারে ‘কোটি কোটি’ টাকা বরাদ্দ!

আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের (আইবিআরপি) আওতায় গত ২৮ জুলাই ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ দরপত্র আহ্বান করেছে জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ২৬টি ও তালতলী উপজেলায় সাতটি ব্রিজ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে ব্রিজ নেই এমন কোথাও নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের কথা বলা হয়নি।

বাঁশের সাঁকো

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, দরপত্রে ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কারের কথা উল্লেখ থাকলেও কয়েকটি স্থানে কোনো ব্রিজই নেই। সেখানে শুধু বাঁশের সাঁকো রয়েছে। আর সেগুলো দিয়ে স্থানীয় মানুষ চলাচল করেন। আবার যেসব স্থানে ব্রিজ আছে সেখানে প্রতিটি ব্রিজেরই দৈর্ঘ্য বাড়তি লেখা হয়েছে। এ ছাড়া সংযোগ সড়কে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাটির কাজ এবং রেল পোস্টসহ নানা খাত দেখিয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, যুগ যুগ ধরে সেখানে কোনো ব্রিজ নেই। জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও আজ পর্যন্ত কেউ একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে শত শত গ্রামবাসীকে বাঁশের সাঁকো দিয়েই খাল পার হতে হয়। বাঁশের সাঁকোগুলোই এখানকার ব্রিজ।

স্থানীয় ঠিকাদার মো. বশির উদ্দিন বলেন, আমতলী উপজেলার অন্তত ২৫টি ব্রিজ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ১৩টি ব্রিজের স্থানে বাঁশের সাঁকো দেখা গেছে। আবার এমন ব্রিজও আছে যেগুলো কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের কোনো প্রয়োজনই নেই। প্রতিটি ব্রিজের দৈর্ঘ্যই বেশি দেখানো হয়েছে।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, মাত্র দেড় কিলোমিটারের একটু বেশি জায়গায় চারটি ব্রিজ সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে দুটি চলাচল উপযোগী, আর বাকি দুটি বাঁশের সাঁকো। ওই দুটো দিয়ে খুব কম মানুষই চলাফেরা করে।

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সার্ভেয়ার আবদুল কুদ্দুস বলেন, ব্রিজের দৈর্ঘ্য ও মাটি পরিমাপের কথা থাকলেও তিনি কিছু করেননি। প্রাক্কলনে স্বাক্ষরের জন্য বলা হলেও পরিদর্শন না করে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে কীভাবে প্রাক্কলন অনুমোদন হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।

বাঁশের সাঁকো

উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়ার পর প্রাক্কলন তৈরির নিয়ম। কিন্তু তিনি এসবের কিছুই করেননি। পরবর্তীতে ঢাকা থেকেই প্রাক্কলন তৈরি ও অনুমোদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রকল্প পরিচালক এটি তৈরি করেছেন, আর অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। তারা যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। তবে প্রাক্কলনে তার স্বাক্ষর নেই, আগের প্রকৌশলী স্বাক্ষর করেছেন।

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহমেদ খান বলেন, এই কাজে শুরু থেকেই জেলা পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রকল্প পরিচালক এটি তৈরি করেছেন, আর অনুমোদন দিয়েছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী। আমরা শুধু তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করেছি মাত্র।

প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হাই বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। বরগুনা থেকে প্রাক্কলন পাঠানোর পর তিনি শুধু সেটি অনুমোদন করে দিয়েছেন। তবে এতো বড় ভুল হওয়ার কথা নয়। তার পরও ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে দরপত্র বাতিল করা হবে।