প্রধানমন্ত্রী: বাবা-মা ও ছেলে সবার হাতেই রক্তের দাগ

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তাদের ছেলে তারেক রহমান- সবার হাতে রক্তের দাগ রয়েছে। সোমবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা

তিনি বলেন, গুম-খুনের রাজনীতি শুরু করে গেছেন জিয়াউর রহমান। তার ধারাবাহিকতায় অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে মানুষ হত্যা করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন।

সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বামীর (জিয়াউর রহমান) যে চরিত্র, তার স্ত্রী খালেদা জিয়ারও সেই একই চরিত্র। খালেদা জিয়া একের পর এক হত্যাকাণ্ড, অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে অসংখ্য মানুষ হত্যা এবং সেসব ঘটনার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি আইন করেছিলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দেওয়ার মাধ্যমে জিয়াউর রহমান খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল। আর ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই খালেদা জিয়া অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে মানুষ হত্যা করেছে। আর যাদের দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, তাদেরও ইনডেমনিটি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এভাবেই তারা রাজনীতি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গুম-খুন নিয়ে যারা কথা বলে তাদের প্রশ্ন- কে এই গুম-খুন শুরু করেছে? জিয়াউর রহমানই তো এটা শুরু করেছে। ছুটিতে ছিল সেনাবাহিনীর অফিসাররা, চলে আসছে, মেরে ফেলা হয়েছে তাদের। পরিবার তাদের লাশ পর্যন্ত পায়নি। সাধারণ সৈনিকেদের হত্যা করেছে, তাদেরও পরিবার লাশ পায়নি। তাদের একটা চাকরিও দেওয়া হয়নি। তারা অমানবিক জীবনযাপন করেছে। শুধু ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য এভাবে সারাদেশকে রক্তাক্ত করেছে। শিক্ষাদীক্ষা তো নাই- কায়েম করতে চেয়েছিল শুধু গুণ্ডামি, অত্যাচার আর খুনের রাজনীতি। তাদের অপকর্ম ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, তারা ভেবেছিল, জাতির পিতাকে হত্যা করে তার নাম মুছে ফেলবে, আমাদের বিজয়ের ইতিহাস মুছে ফেলবে। লাখো শহীদের মহান ত্যাগ, লাখো মা-বোনের ওপর নির্মম অত্যাচারের যে ইতিহাস- সেটাও মুছে ফেলবে। দেশ স্বাধীন হয়েছিল যে আদর্শের ওপর, সেটাই তারা ধ্বংস করতে চেয়েছিল।

কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দেশ গড়ে তোলার কাজ করছে। আর সে কারণেই সরকার গঠনের পরও প্রতিশোধ নিতে যাইনি। বরং দেশের উন্নয়নে নজর দিয়েছি আমরা। শিক্ষাদীক্ষার দিকে দৃষ্টি দিয়েছি। দেশের হারানো সম্মান ফেরানোর চেষ্টা করছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যার মধ্য দিয়ে যে সম্মান ভূলণ্ঠিত করা হয়েছিল, সেই হত্যাকারীদের বিচার আমরা করেছি। বাংলাদেশে যে ন্যায়বিচার সম্ভব সেটা নিশ্চিত করেছি হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে। হত্যাকারীদের কেউ কেউ এখনো পলাতক আছে, কিন্তু তার পরও বিচার করেছি। অবশ্য এটা ঠিক যে, যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, এখনো তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এগুলো একদিন না একদিন বের হবে।

ছাত্রলীগের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে ছাত্রলীগ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবে, সেটাই চাওয়া। ভোগের মধ্যে কিছু নেই, ত্যাগের মধ্য দিয়েই আসে শান্তি। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের কাছ থেকে কিছু নিয়ে যাননি, বরং দিয়েই গেছেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত রক্তটাও দিয়ে গেছেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।