টিআইবি: ‘নিবন্ধনের নির্দেশ’ গণমাধ্যমকে চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণের নীলনকশা

রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকার অনলাইন পোর্টাল এবং আইপি টিভির জন্য নিবন্ধন নিতে হবে বলে 'জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা, ২০১৭ (সংশোধিত, ২০২০)' এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তবে এর মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ নিশ্চিত হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, এই নির্দেশ মূলত গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অপচেষ্টা বাস্তবায়নের পথে আরো এক আত্মঘাতী পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ নিশ্চিত হবে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা বিদ্যমান থাকার পরও আলাদা করে নিবন্ধনের এই নির্দেশ সাংবাদিকতার স্বার্থে নাকি গণমাধ্যমকে চাপে রেখে সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলকে সমালোচনা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা।

'সংবিধান স্বীকৃত অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যমগুলোকে আরো শক্তিশালী ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করাটাই প্রত্যাশিত ছিল। অথচ সেখানে সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহের সাংবিধানিক অধিকার হরণকে আইনি কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসার একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে। যা কোনোভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না।'

সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যেখানে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করা হচ্ছে, সেখানে একই সঙ্গে কিভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সাহসী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করার মতো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে প্রশ্ন রাখেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, করোনার এই সংকটের সময়ে গণমাধ্যমগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে আছে। আর এমন সময়ে খসড়া অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা চূড়ান্ত না করেই তাড়াহুড়ো করে নিবন্ধনের এই নির্দেশ রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রচেষ্টার নিদর্শন ছাড়া কিছুই নয়। এই নির্দেশ মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য কার্যকর হুমকি হয়ে উঠার আশঙ্কাও অমূলক নয়। নীতিমালায় কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও সেই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার কোনো ক্ষমতা নেই।

কার্যত কমিশনও সরকার উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ কর্তৃপক্ষে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাবে। তাই তাড়াহুড়ো না করে বরং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতেই এ ধরনের স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারতো। একই সঙ্গে পৃথক নিবন্ধনের নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিবর্তনমূলক ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানাই।