ঘটনার বর্ণনা দিলেন বাবা

দিনাজপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমকে (৩৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকেও (৬৫) কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছেন হামলাকারীরা। তিনি এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ওয়াহিদা খানম

কে বা কারা এ হামলা চালিয়েছে সে সম্পর্কে বলতে না পারলেও ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ জানিয়েছেন, হামলাকারীরা মুখোশ পড়া ছিল। আজ বৃহস্পতিবার কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে চেষ্টা করেন।

ওমর আলী শেখ বলেন, বুধবার দিবাগত রাত ৩টা বা সাড়ে ৩টার দিকে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে মাত্রই শুয়েছিলেন, চোখেও ঘুম চলে আসছে। ঠিক এমন সময় মেয়ের চিৎকার শুনে উপর তলায় যাওয়ার পর সে আমাকে ডেকে বলছিল, 'ঘরে কেউ ঢুকেছে বাবা, দ্রুত আসো।' তখন দেখি মুখোশধারী এক ব্যক্তি মেয়ের কাছে চাবি চাচ্ছে এবং টাকা-পয়সা ও গহনা কোথায় তা জানতে চাচ্ছিল। চাবি না দিলে নাতিকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।

এক পর্যায়ে তাকে ধরে ফেলি এবং ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তখন ওই ব্যক্তি হাতুড়ি দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করে। আর আমি মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর কী হয়েছে তা আর বলতে পারবো না, যোগ করেন তিনি।

আগের কোনো শত্রুতা বা অন্য কোনো কারণে এ হামলা হয়েছে কি না সে সম্পর্কে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ওই ব্যক্তি শুধু চাবি আর টাকা-পয়সা কোথায় তা জানতে চেয়েছিল। মুখোশ পড়া থাকায় তাকে চিনতে পারিনি। জ্ঞান ফেরার পর শুনেছি, মেয়েকে নাকি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। কিন্তু কেনো এ হামলা হয়েছে তা জানি না।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা সরকারি বাসভবনে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাদেরকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়।

পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে রমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওয়াহিদা খানমকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। তবে তার বাবা ওমর আলীকে রমেক হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব জানান, কে বা কারা ঠিক কী কারণে এ হামলা চালিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। পুলিশ বাসভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করছে এবং ঘটনার তদন্ত করছে। শিগগিরই জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিসি মাহমুদুল আলম জানান, ভেন্টিলেটর ভেঙে এক যুবক বাসভবনে প্রবেশ করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাদের দুজনকে জখম করে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে।