দুর্বিসহ সময়ের কথা বর্ণনা করলেন সানচেজ

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বছর দেড়েক কতটা দুর্বিসহ কেটেছে সেটার বর্ণনা দিলেন অ্যালেক্সিস সানচেজ। বার্সেলোনার সাবেক চিলিয়ান স্ট্রাইকার জানালেন প্রথম দিন অনুশীলন শেষেই ম্যানইউ ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে ইন্সটাগ্রামে এক ভিডিও পোস্টে সেই হতাশা ও ক্ষোভ ঝড়ল সানচেজের কণ্ঠে।

তার শেষটা অনেক আগেই দেখে ফেলেছিলেন নিন্দুকেরা। ইংল্যাান্ড ছাড়ার পর সমালোচকদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন সানচেজ। আগুন ঝরিয়েছেন ইন্টার মিলানের জার্সিতে। ম্যানইউ থেকে ধারে খেলতে আসা সানচেজ মুগ্ধ করেছেন ক্লাবকর্তাদের। পুরস্কার হিসেবে গত মাসে তাকে পাকাপাকিভাবে রেখে দিয়েছে ইন্টার মিলান।

হারানো সুখ ফিরে পাওয়ার পর দুর্বিসহ সময়ের কথা বর্ণনা করলেন সানচেজ, ‘(ম্যানইউতে) প্রথম দিন অনুশীলন শেষেই আমি অনেককিছুই বুঝতে পেরেছিলাম। বাড়ি ফিরে পরিবার এবং কোচের সঙ্গে আলোচনা করি। আমি চুক্তির শর্ত ভেঙে আর্সেনালে ফিরে যেতে পারিনি। ম্যানইউতে কিছু বিষয়ের সঙ্গে মানাতে পারিনি। কিন্তু ততক্ষণে আমি চুক্তিপত্রে সই করে ফেলেছি।’

৩১ বছর বয়সী সানচেজ যোগ করেন, ‘একমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। আমি একইরকম অনুভব করি। ওই সময়ে দল হিসেবে আমরা সংঘবদ্ধ হতে পারিনি। সংবাদকর্মীরাও কিছু না জেনে আমাকে কষ্ট দিয়েছেন। ক্লাবের সাবেক ফুটবলারও কিছু না জেনে অনেক কথা বলেছেন। তারাও আমাকে হতাশ করেছেন।’

২০১৮ সালে আর্সেনাল ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন সানচেজ। রেড ডেভিলসদের হয়ে ৪৫ ম্যাচের মধ্যে শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়েছেন খুব কমই। লাল দুর্গে তার সাফল্য বলতে পাঁচটি গোল এবং নয়টি অ্যাসিস্ট। ম্যানইউর মতো এত বড় ক্লাবে একজন স্ট্রাইকারের কাছে এমন পারফরম্যান্স প্রত্যাশিত নয়।

খুব স্বাভাবিকভাবেই গত বছর ইন্টার মিলানে ধারে খেলতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সানচেজকে। ক্লাব ছাড়ার সময় তার সঙ্গী হয়েছে একগুচ্ছ অভিযোগ। সেই হতাশাও চেপে রাখেননি বার্সার সাবেক স্ট্রাইকার, ‘দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ের ওপরও খেলোয়াড় নির্ভরশীল। আমাদের পরিবারের মতো থাকা দরকার ছিল। যা আমরা পারিনি। যার প্রভাব পড়েছে মাঠের খেলায়। অথচ সবাই আমাকে দোষারোপ করতো।’

একটা পর্যায়ে সানচেজ নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান, ‘আমি নিজের সমালোচনা করতে থাকি এবং ভাবি আমার আরো ভালো খেলা উচিত। আমাকে সবসময় দোষারোপ করা হতো। আমি কয়েক মিনিটের জন্য মাঠেও নামলেও দোষ দেওয়া হতো।’ সানচেজের দিকে যতই তির ছোড়া হোক না কেন পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে অন্য কথা।

ম্যানইউর হয়ে ৪৫ ম্যাচে পাঁচ গোল করা সানচেজ আর্সেনালেই গোল করেছেন ৮০টি। গানারদের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন ১৬৬টি। এ সময়ে সতীর্থদের অসংখ্য গোলেও অবদান রেখেছেন। আর্সেনালের সেই ফর্ম ইন্টার মিলানে ফিরে পেয়েছেন তিনি। সেখানে রোমেলু লুকাকুর সঙ্গে রসায়ন জমে ওঠে তার। এই দুজনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ইতালিয়ান সিরি’এ লিগ ও ইউরোপা লিগে রানার্সআপ হয়েছে ইন্টার মিলান।

যেই সানচেজকে ঘিরে এত অভিযোগ ছিল তাকে নিয়ে এখন আফসোস করছে ম্যানইউ। দলটির প্রধান কোচ ওলে গানার সুলশারের কণ্ঠে সাবেক ফুটবলারের জন্য শুধুই আশীর্বাদ ঝরেছে, ‘আমরা সবসময়ই তার ভালোটা চেয়েছি। ও বড় মাপের খেলোয়াড়। আমরা সবসময়ই তার কাছ থেকে সেরা ফুটবলটা দেখতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখানে তার সেরাটা দেখতে পারিনি।’

তাহলে সমস্যাটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মধ্যেই? তা নয় তো কী! সানচেজ আলো ছড়িয়েছেন জাতীয় দল চিলিতে। দুর্দান্ত খেলেছেন বার্সেলোনার জার্সিতে। আগুন ঝরিয়েছেন ইন্টার মিলানের হয়ে। তাকে সেরা ছন্দে দেখা গেল না কেবল ইউনাইটেডেই। সঠিক পরিচর্যা হলে হয়তো ম্যানইউতে সানচেজের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।