র‌্যাব: চুরিতে বাধায় ইউএনওর ওপর হামালা

চুরিতে বাধা দেওয়ায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তারা বাবা ওমর আলীর ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় র‌্যাব-১৩ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস।

আসামিদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব

তিনি জানান, ঘোড়াঘাট ইউএনও ও তার বাবার ওপর হামলার পর এ ঘটনার ছায়াতদন্তে নামে র‌্যাব-১৩। সন্দেহের ভিত্তিতে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের মধ্যে তিন আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলে বাকি তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় জড়িতরা হলেন- ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল হক (৩৫), একই এলাকার মৃত ফরাজ উদ্দিনের ছেলে নবীরুল ইসলাম ও উপজেলার চক বাবুনিয়া বিশ্বনাথপুরের খোকা চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসাদুলকে হাকিমপুর থানার বাংলা হিলি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নবীরুল ও সান্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দুজন ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করেন।

ইউএনও ওয়াহিদা খানম- ফাইল ছবি

এ ছাড়া ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম (৪২), শিংড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা আদুর ছেলে মাসুদ রানা (৪০) ও নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশ (৩৮)। তারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, অভিযুক্ত আসাদুলের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা চুরির উদ্দেশ্যে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশের পর চুরিতে বাধা দেওয়ায় তারা হাতুড়ি দিয়ে ওয়াহিদা ও তার বাবাকে পিটিয়ে জখম করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হলো নবীরুল।

তিনি আরো জানান, হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইউএনও'র বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করেন। এতে লাল গেঞ্জি পরা একজনকে দেখা যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসাদুল স্বীকার করেছে লাল গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তি তিনি ছিলেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে সেই গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসাদুলের বক্তব্য অনুযায়ী আপাতত এইটুকুই তথ্যই পাওয়া গেছে জানিয়ে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, তারা এ বিষয়ে আরো গভীরভাবে তদন্ত করবেন। এখনই এই ঘটনার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য চুরিই ছিলো কি-না তা নিশ্চিত নয়। তাই তারা আরো গভীর তদন্ত করবেন। প্রয়োজনে কাউকে আটক বা রিমান্ডেও নেওয়া হতে পারে।

গত বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ওয়াহিদ খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা সরকারি বাসভবনে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাদেরকে মুমূর্ষু অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায়।

পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে রমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওয়াহিদা খানমকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। তার বাবা ওমর আলী রমেক হাসপাতালেই চিকিৎসা আছেন।