শুভ জন্মদিন ‘ওয়ানম্যান আর্মি’

বাংলাদেশের সাথে সিরিজের আগে যেকোনো দলই এখন তাদের হোমওয়ার্কে বেশি সময় বরাদ্দ রাখে। আলাদাভাবে এবং খুব যত্ন সহকারে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়ে তবেই ব্যাট-বলের লড়াইয়ে মাঠে নামে। কারণ ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের জায়গাটা এখন বেশ পোক্ত এবং শক্তিশালী। কিন্তু এই জায়গায় একদিনেই আসা যায়নি। পার হতে হয়েছে অনেক কণ্টকাকীর্ণ মুহুর্ত, অনেক বাধা, প্রতিকূলতা।

মোহাম্মদ রফিক

বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুঃসময়ে অনেক যোদ্ধা ছিল, যারা সব সময় চেষ্টা করেছে ব্যাট বলের লড়াইয়ে দেশের ক্রিকেটে সুদিন আনতে। এদের মধ্যে সবার ওপরেই থাকবে মোহাম্মদ রফিকের নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক অঘোষিত যোদ্ধা তিনি। ব্যাট কিংবা বল, দলের প্রয়োজনে দুটোতেই সমান ভূমিকা রাখতেন কেরানীগঞ্জের এই বাঁ-হাতি।

১৯৯৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু রফিকের। এরপর খেলেন ১২৫টি একদিনের ম্যাচ। ব্যাট হাতে ১১৯১ রানের পাশাপাশি বল হাতে নেন ১২৫ উইকেট। ২০০০ সালে মাথায় টেস্ট ক্যাপ চাপান ওই ভারতের বিপক্ষেই। ৩৩ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ১০০। ব্যাট হাতে সংগ্রহ ১০৫৯ রান। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্বও দেখান রফিক।

কোনো সন্দেহ নেই রফিক ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘ওয়ানম্যান আর্মি’। ভরাডুবি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের তখনকার নিত্যসঙ্গী। প্রায় প্রতি ম্যাচেই দল থাকতো চরম বিপর্যয়ে। এরকম অনেক বিপর্যয় তিনি একা হাতে সামাল দিতেন। দলের প্রয়োজনে ব্যাট-বল, দুই বিভাগেই জ্বলে উঠতেন সাবেক এই অলরাউন্ডার।

এখন আমাদের সাকিবের মতো ক্রিকেটার আছে। কিন্তু রফিকের ভূমিকা মোটেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সেসময়ের প্রেক্ষাপট হিসেব করলে তিনিও কম যাননি। যুগে-যুগে বাংলাদেশ হয়তো আরও অনেক অলরাউন্ডার পাবে। কিন্তু রফিক থেকে যাবে তার মহিমায় অমর হয়ে।

রফিক দেখিয়েছেন, একটি হত-দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও কীভাবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানো যায়, ছোট দলের হয়ে মাঠে নেমেও কিভাবে ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলা যায়।

১৯৭০ সালের আজকের এই দিনে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন সাবেক এই ক্রিকেটার। তাকে হয়তো আর কখনো ব্যাট-বল হাতে বাইশ গজ কাঁপাতে দেখা যাবে না। কিন্তু দুঃসময়ে তার গড়া কীর্তিগুলো এদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে। যা উৎসাহ জোগাবে অনাগত ক্রিকেটারদের।