ফিরছে মিরকাদিম ও আরসিসি জাতের গরু

বাংলাদেশে গরুর একটি বিশেষ চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির সময় এখানে বিপুল পরিমাণ গরু কেনা-বেচা হয়। গরুর চামড়া থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি ও দুধে প্রচুর পুষ্টিগণ থাকায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেও অনেকে লালন-পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে ভালো জাতের গরুকেই বেছে নেয়া হয়। তবে দেশে আগে বিভিন্ন জাতের গরু দেখা গেলেও দিন দিন সেগুলো বিলুপ্ত হতে চলেছে।

(বাঁয়ে) আরসিসি ও (ডানে) মারকাদিমের গরু- ফাইল ছবি

এর মধ্যে অন্যতম হলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রেড চিটাগাং ক্যাটেল বা আরসিসি ও মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের গরু। ক্রেতাদের কাছে দেশীয় এই দুই জাতের গরু বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তবে এগুলো এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। চট্টগ্রাম ও মুন্সিগঞ্জেও এই দুই জাতের গরু এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।

পুরান ঢাকার মানুষজনের কাছে কোরবানির জন্য মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের গরুর একটি বিশেষ চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ঈদুল আজহায় পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ খেলার মাঠে এ গরু বিক্রি হয়। কিন্তু বলা হয়- সেগুলো আসলে মিরকাদিমের গরু নয়। অভিযোগ রয়েছে- দেখতে অনেকটা এক হওয়ায় বিক্রেতারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ক্রেতাদের কাছে ভারতের হরিয়ানা জাতের সাদা গরু বিক্রি করে থাকেন।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রেড চিটাগাং ক্যাটেল বা আরসিসি- ফাইল ছবি

দেশীয় এই দুই জাতের গরুকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে এবং এর উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)। বর্তমানে তাদের কাছে আরসিসি জাতের গরু ২৫৬টি এবং মিরকাদিম জাতের গরু রয়েছে ৪৫টি। তারা এই দুই জাতের গরুকে আরো উন্নত করার চেষ্টায় আছেন। তাদের পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে এ জাতের গরু সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। যাতে ক্রেতারা প্রতারণার স্বীকার না হয়ে বাজার থেকে সঠিক জাতের গরু কিনতে পারে।

আরসিসি জাতের গরু ছোট-খাটো হলেও দেখতে অনেকটা সুদর্শন হয়। এদের গায়ের রঙ হয় লাল। এদের চামড়া পাতলা ও শরীরের পেছনের দিকটা হয় ভারী। এ জাতের গরু চেনার আরো উপায় হলো এদের মুখ খাটো ও চওড়া, গলা খাটো, শিং ছোট ও চ্যাপ্টা ধরনের হয়। গলম্বল মাঝারি ধরনের ও পিঠে সামন্য কুঁজ রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের গরু- ফাইল ছবি

বিএলআরআইয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরসিসি জাতের গরুর ওজন ২০০ থেকে ৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়। এরা এক বিয়ানে (২৬০ দিনে) ৫০০-৬০০ কেজি দুধ দেয়। গড় দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ২ দশমিক ২ কেজি। এদের দুধে প্রচুর পরিমাণে চর্বি রয়েছে। দশ বছরে এ জাতের গরু ৬-৭টা বাছুর দিয়ে থাকে। এগুলো দেশীয় জাতের হওয়ায় এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গেও খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে। তাই লালন-পালনও খুব সহজ।

অন্যদিকে মারকাদিমের গরুর গায়ের রঙ হয় সাদা। এটা সহিষ্ণু ও বাচ্চা উৎপাদনশীল। এ জাতের গাভী ১০ বছরে ১৪-১৬টা বাছুরের জন্ম দেয়। যেখানে অন্যান্য দেশি জাতের গরু মাত্র ৫-৮টি বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে।

বিএলআরআইয়ের কর্মকর্তা জানান, গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে দেশে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদন করা যায়। তাদের হাত ধরেই স্বমহিমায় ফিরছে মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের গরু। এ জন্য উন্নত মানের গাভী ও ষাঁড় বাঁছাই করা হয়েছে।

বিএলআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার বলেন, বিলুপ্তপ্রায় এই দুটি জাতের গরু সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এই দুই জাতের গুরু কৃষক ও খামার পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তারা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে কিছু ষাঁড় ও গাভী সরবরাহ করেছেন।