পানির নিচে বরফ আবিষ্কার

দিনকে দিন উত্তর মেরুর বরফ গলে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। কেনো বরফ গলে যাচ্ছে, কীভাবে তা গলছে কিংবা সেগুলো আবার কীভাবে জমাট বাঁধছে, এ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে দীর্ঘদিন যাবত উত্তর মেরু অঞ্চলে গবেষণা চালিয়েছেন একদল গবেষক। আর তা করতে গিয়ে ভিন্ন এক জিনিস আবিষ্কার করেছেন তারা।

পানির নিচে নতুন বরফ আবিষ্কার

সাধারণত শীতকালে উত্তর মেরু অঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলে না, মাসের পর মাস সেখানে একটানা অন্ধকার অবস্থা বিরাজ করে। ফলে এই সময়টিতে ওই অঞ্চল সম্পর্কে মানুষের কাছে তেমন ধারণা নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া সেখানে আর কী কী ঘটছে তা কেউ জানে না। অথচ পৃথিবীর ওপর অঞ্চলটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

এসব রহস্য উদঘাটন করতে টানা কয়েক মাস বৈরি শীতল পরিবেশে ওই অঞ্চলে বিচরণ করেছে এক আন্তর্জাতিক গবেষক দল। মেরু অঞ্চলে এর আগে কখনোই এত বড় অভিযান হয়নি। সেই দলটির একজন সদস্য আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক পদার্থবিদ ক্রিস্টিয়ান হাস। এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কিছু তথ্য জানিয়েছেন, যা নিয়ে মানুষের ধারণা ছিল না।

ক্রিস্টিয়ান হাস জানান, শীতকালে উত্তর মেরু অঞ্চলে বরফ জমে এবং গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত তা টিকে থাকে। এটি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সম্পূর্ণ বৈরি শীতল পরিবেশে থাকতে হয়েছে। বাতাসে মাইনাস ৩০ থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম তাপমাত্রা ছিল। এতে কাজ করা খুব কঠিন ও বিপজ্জনক।

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক গবেষক দলটি বৈরি শীতের মধ্যে অক্টোবর মাস থেকে 'পোলার স্টার' নামের একটি জাহাজে করে উত্তর মেরু সাগরে বরফের মধ্যে ভেসে বেড়িয়েছে। কেনো বরফ সঙ্কুচিত হয় সেটির উত্তর খুঁজেছে। আর তা জানতে বরফের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে নমুনা নিয়েছে, তাপমাত্রা ও বরফের গতিবিধি পরিমাপ করেছে এবং বরফ কেটে পাতলা চাকতি তৈরি করেছেন দলে সদস্যরা।

পানির নিচে নতুন বরফ আবিষ্কার

নতুন আবিষ্কার নয়, বরং নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এই অভিযানে তারা বরফের নিখুঁত জীবনচক্র রচনা করেছেন। করেছেন নতুন আবিষ্কার। পাতলা বরফের স্তর দিয়ে তৈরি চকমকে মেঘ খুঁজে পেয়েছেন তারা। এই প্লেটলেট আইস মানুষের হাতের মতো বড় পাতলা বরফের স্তর। যা নানাভাবে ভাসমান বরফের নিচে লেগে থাকে।

সাবমেরিন যখন দীর্ঘ সময় ধরে অন্ধকারে হেডলাইট জ্বালিয়ে দূর থেকে আলো ফেলে তখন সেই বরফ চকমক করতে থাকে এবং কাছে গেলে দেখা যায় সেগুলো আসলে বরফের ক্রিস্টাল বা স্ফটিক। দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে আগেই এমন চকমকে বরফের স্তর দেখা গেলেও উত্তর মেরু অঞ্চলে এটাই প্রথম। ভসমান বরফের নিচে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে হলেই এগুলো সৃষ্টি হয়। প্লেটলেট আইসগুলোর মাঝে অনেক ফাঁকা অংশের সৃষ্টি হয়।

এই বরফের স্তরের মধ্যে ক্ষুদ্র জীব ও সামুদ্রিক উদ্ভিদের পাশাপাশি জু প্ল্যাংকটন অর্থাৎ ক্রিলের মতো ক্ষুদ্র চিংড়ি জাতীয় প্রাণীও দেখা গেছে। অ্যাম্ফিপড জাতীয় প্রাণী অ্যালজির খোঁজে প্লেটলেট আইসের মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছে। স্তরটি প্রাণীগুলোকে বড় প্রাণীর হামলা থেকে রক্ষা করে থাকে, যোগ করেন ক্রিস্টিয়ান হাস।