আপনি পড়ছেন

বলিউড সুপার স্টার রাজ কাপুর ও দিলিপ কুমারের পৈত্রিক বাড়ি উত্তর পাকিস্তানের পেশোয়ারে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির ঠিক আগে ভারতে চলে যান এই দুই তারকা। বাড়িটির বর্তমান মালিক এটি ভেঙে নতুন বাড়ি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা হতে দিচ্ছে না।

pakistan to preserve bollywood stars home in peshawar

আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, বর্তমান মালিকের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে সেখানে যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। বাড়িটির ঐতিহাসিক মূল্যের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংবাদটিতে বলা হয়েছে।

পেশোয়ারের ঐতিহাসিক প্রাণমুখরতা এমনিতেই বিখ্যাত। তার উপর বলিউডের দুজন সুপার স্টারের পৈত্রিক বাড়ি থাকার কারণে পেশোয়ার শহর আরো বেশি প্রাণবন্ত। সেই বাড়িটি তাই পাকিস্তান সরকারের কাছেও ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান একটি স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রাজ কাপুর এবং দিলিপ কুমার পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বড় হয়ে ওঠেন। পরে মুম্বাইয়ে গিয়ে প্রজন্মের সেরা অভিনেতা হিসেবে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন। এ দুজন ছাড়াও আরো কয়েকজন বলিউড তারকার পৈত্রিক নিবাস এই অঞ্চলে ছিলো। যেমন শাহরুখ খানের পূর্বপুরুষরাও ছিলেন পাকিস্তানের পেশোয়ার অঞ্চলের বাসিন্দা।

বলিউডের সাথে পেশোয়ারের বিশেষ সম্পর্ক

পেশোয়ারে বড় হওয়া কাপুর ও কুমার ১৯৪০ সালে অভিনয় করা শুরু করেন এবং ক্রমেই সেই সময়ের ভারতবর্ষের চলচ্চিত্র শিল্পের সেরা অভিনেতা হয়ে ওঠেন, পরে যা বলিউড নামে স্বীকৃত হয়। ১৯৪৯ সালে আন্দাজ নামে একটি ছবিতে এ দুজন এক সঙ্গে অভিনয় করেন, ছবিটি ছিলো তাদের প্রাথমিক জীবনের বড় এক সফলতা।

কুমার বিখ্যাত ছিলেন দুঃখী চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য। অন্য দিকে কাপুরের ডাকনাম ছিলো “দ্য শোম্যান”। আনন্দদায়ক, কৌতুকপূর্ণ বা কমনীয়; যে কোনো চরিত্রের সঙ্গে তিনি দারুণ দক্ষতায় মিশে যেতে পারতেন। ১৯৮৮ সালে ৯৭ বছর বয়সে কাপুরের মৃত্যু হয়। তিনি তার স্ত্রী সাইরা বানুন সাথে মুম্বাইয়ে বসবাস করতেন।

pakistan to preserve bollywood stars home in peshawar 1

১৯৭০ সালের পর থেকে পেশোয়ারের সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। সাম্প্রতিক সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদিদের উত্থান ঘটেছে। যা সমাজে নিয়ে এসেছে রক্ষণশীলতা। এ ছাড়া উত্থান ঘটেছে তালেবানদেরও যারা অনেক ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে।

এ দিকে সেখানকার আঞ্চলিক সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ১০০ বছরের বেশি সময়ের পুরোনো ১৮০০ ভবন সরকারি দখলে নিয়ে তা পুনর্গঠন করা হচ্ছে। প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর বিষয়ক পরিচালক ড. আব্দুস সামাদ এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের কারণে পেশোয়ারের অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আমরা পেশোয়ারের ইতিহাস ঐতিহ্য পুনরায় স্থাপন করতে চাই। সে উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

কাপুর ও কুমারদের বাড়িটি এখন ব্যক্তিগত মালিকানার অধীনে আছে। বর্তমান মালিক বলিউড সুপার স্টার শাহরুখ খানদের পরিবারর সাথে কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পেশোয়ারের যে ছোট অঞ্চল থেকে এতোজন বলিউড তারকার জন্ম হয়েছে, সেই অঞ্চল ছোটখাট একটি বলিউড যাদুঘর হওয়ার জন্য উপযুক্ত।

পেছনে পড়ে আছে দীর্ঘ ইতিহাস

কাপুর ও কুমারদের বাড়িটি এখন একটি জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। বহু বছর আগে মালিকানা বদল হলেও বর্তমান মালিক সেখানে তেমনক কিছু করতে পারেননি। বহু টাকা খরচ করে বানানো বাড়িটি বলতে গেলে প্রায় ধসে পড়েছে। দামি দরজা-জানালা এখন জীর্ণ হয়ে গেছে। কাঠের নানা কারুকাজ মলিন হয়ে গেছে।

স্থানীয় সরকার মনে করছে এই বাড়িটিকে ঠিকঠাক টিকিয়ে রাখা এক কঠিন কাজ হবে। ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সালের দিকে রাজ কাপুরের দাদা দিওয়ান বাসেশ্বরনাথ এই বাড়িটি তৈরি করেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ বিভাগে কাজ করতেন। তার জন্মস্থান বর্তমান পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে। পুলিশে কাজ করার সুবাদে তিনি পেশোয়ারে বদলি হিসেবে কাজ করতে যান।

বাসেশ্বরনাথের ছেলে ছিলেন পৃত্থিরাজ কাপুর। তিনি শব্দবিহীন যুগের অভিনেতা ছিলেন। পেশোয়ারের স্থানীয় নাটকে অভিনয় করে সুনাম করেন তিনি। পরে সেখান থেকে ১৯২০ সালের দিকে তিনি চলে যান মুম্বাইয়ে। তার তার লক্ষ্য ছিলো বড় পর্দায় অভিনয় করা। পৃত্থিরাজের ছেলে রাজ কাপুরের জন্ম হয় পেশোয়ারের বাড়িটিতে। পরবর্তীতে তিনি বলিউডের অন্যতম সুপার স্টারে পরিণত হন।

অভিনয় ক্যারিয়ারের জন্য মুম্বাই চলে গেলেও কুমার ও কাপুর পরিবারের লোকজন প্রায়ই পেশোয়ারে আসতেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির কয়েক বছর আগে বাড়িটি বিক্রি করে দেন তারা, এমন তথ্য জানিয়েছেন কালচারাল হ্যারিটেজ কাউন্সিল অব পেশোয়ারের শাকিল ওয়াহিদুল্লাহ। তাদের প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে পেশোয়ারের পুরোনো ভবনগুলো অক্ষত রাখার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

১৯৯০ সালের দিকে কাপুরের দুই সন্তান ঋষি ও রণধির পেশোয়ারে যেতেন। ঋষি কাপুর, রনবির কাপুরের বাবা, চলতি বছরের শুরুর দিকে মারা যান। তার মৃত্যুতে পেশোয়ারের বহু মানুষ শোক প্রকাশ করেন এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি জ্বালান।

দিলিপ কুমারদের বাড়িটি তৈরি করেন তার বাবা, যিনি পেশায় একজন ফল বিক্রেতা ছিলেন। ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে দিলিপ কুমার জন্মগ্রহণ করেন এবং তার নাম ছিলো মোহাম্মদ ইউসুফ খান। ১৯২২ সালের দিকে দিলিপ কুমারের বাবা ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। পরে তিনি মুম্বাই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৩০ সালের দিকে মাত্র ৫০০০ হাজার রুপি বা এ রকম একটা মূল্যে পেশোয়ারের বাড়ি বিক্রি করে দেন দিলিপ কুমারের বাবা। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার বাড়িটির মালিকানা বদল হয়েছে এবং বর্তমানে এটি গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

১৯৮৮ সালে একটি সরকারি পুরস্কার গ্রহণের জন্য পাকিস্তান এসেছিলেন দিলিপ কুমার। এরপর ১৯৯৭ সালে আবার তিনি বাড়িটি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু তার আগমনের খবর শুনে বাড়িটি ঘিরে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে। ফলে তিনি আর বাড়িটিতে আসেননি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.