গড়ার দিনই ভাঙা হলো আবরার স্মৃতিস্তম্ভ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণে নির্মিত ‘আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ' ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে সেটি ভেঙে ফেলা হয়।

গড়ার দিনই ভাঙা হলো আবরার স্মৃতিস্তম্ভ

এর আগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের ব্যানারে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নির্মাণ শুরু করে বুধবার সকালে তা শেষ হয়।

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে বুয়েটের পার্শ্ববর্তী পলাশী মোড়ে আবরার ফাহাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।

ভাঙার আগে আবরার স্মৃতিস্তম্ভ

স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে লেখা হয় ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’। আর এটি নেওয়া হয় আবরার ফাহাদের ফেসবুল ওয়াল থেকে।

ম্মৃতিস্তম্ভ ভাঙার বিষয়ে রাজধানীর চকবাজর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, স্তম্ভটি পুলিশ ভেঙেছে কি না- সেটা তার নলেজে নেই।

আবারারের প্রতি শ্রদ্ধা

এদিকে, আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, কোনো দেশপ্রেমিক মানুষের পক্ষে এটা ভাঙা সম্ভব না। আমাদের আহ্বান থাকবে, যারা এটাকে ভেঙেছেন তারা যেন এটা পুনরায় তৈরি করে দেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, স্তম্ভটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর। সেইসঙ্গে আবারো তা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এ দেশে ভারতীয় আগ্রাসন এবং দেশের শিক্ষাঙ্গণে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-সহিংসতার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো আবরার ফাহাদ। তার স্মৃতি রক্ষার জন্যই আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে মঙ্গলবার রাতে স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আমরা আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ করলাম, ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই সরকার সেটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দিয়ে আবরারের নাম মুছে ফেলা যাবে- সরকার যদি এমনটা ভাবে, তাহলে তা ভুল হবে। কারণ দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে রয়েছে আবরার। আবরার আমাদের প্রেরণা। ভারতীয় আগ্রাসনের জ্বলন্ত প্রতীক।’

নূর আরো বলেন, ওই একই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে আবরার স্মৃতি সংসদের পাশে থাকব আমরা।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর পরদিন আবরারের বাবা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এজাহার বহির্ভূত ৬ জন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২২ জনকে। বাকি ৩ জন এখনো পলাতক রয়েছে।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২৫ আসামির বিচার চলছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ। এ আদালতে গত সোমবার আবরারের বাবা বরকত উল্লাহর জবানবন্দি দেয়ার মধ্য দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলেকে ছয় ঘণ্টা যাবত অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আসামিরা। আমি এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই।

উল্লেখ্য, চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের প্রথম বর্ষপূর্তিতে মঙ্গলবার রাতে ওই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়।