‘ডেডলাইন’ ১৮ অক্টোবর

ডিজিটাল বাংলাদেশে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ (ক্যাবল টিভি) সেবা ছাড়া যেখানে একদিনও চলে না, সেখানে আগামী ১৮ অক্টোবর (রোববার) থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই দুই সেবা বন্ধ রাখার কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো এখনো তাদের দাবির বিষয়ে অনড় থাকায় এবং সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্যাবল সংযোগ - ফাইল ছবি

জানা গেছে, বিকল্প ব্যবস্থা না করে এবং সময় না দিয়ে ক্যাবল কাটার প্রতিবাদে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের সংগঠন আইএসপিএবি ও ক্যাবল নেটওয়ার্ক অপারেটরগুলোর দিনের ‘পিক টাইমে’ সেবা বন্ধ রাখার কর্মসূচি দিয়েছে। এমনটি করা হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর্থিক খাতের লেনদেন। বিশেষ করে ফিক্সড ব্রডব্যান্ডনির্ভর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, শেয়ারবাজার, ব্যাংক, এটিএম বুথ, কর্পোরেট হাউসের সেবা বাধাগ্রস্ত হবে।

সারাদেশে ক্যাবল টিভির সেবা বন্ধ থাকলে ক্ষতির মুখে পড়বে শিক্ষার্থীদের অনলাইন স্কুল কার্যক্রমও। চলমান করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সামনে বিকল্প উপায়ও নেই।

এসব বিষয় সামনে রেখে সংগঠন দুটিকে তাদের কর্মসূচি স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এর জবাবে তারা বলছেন, পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় তারা সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। এখন ক্যাবল না কাটা এবং বিকল্প ব্যবস্থার জন্য যৌক্তিক সময় দেয়ার লিখিত আশ্বাস পেলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।

সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো ধরনের সময় না দিয়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির ঝুলন্ত তার-ওভারহেড কেটে ফেলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্যাবল কাটা হয়েছে, যা ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই।

তবে ডিএসসিসি বলে আসছে, বিদ্যুতের খুঁটিতে তার ঝুলিয়ে সেবা দেয়ায় জঞ্জালের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরীর সৌন্দর্যহানি ঘটছে, বিদ্যুতের তারও ঝুঁকিতে থাকছে। এভাবে সেবা দেয়ার জন্য সংগঠন দুটি সিটি কর্পোরেশনের কোনো অনুমতিও নেয়নি। এভাবে চলতে পারে না।

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ক্যাবলের তার সরাতে দুই মাসের বেশি সময় বেঁধে দিয়েছে আইএসপিএবি ও কোয়াবকে। এ ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবার (এনটিটিএন) কাজ দ্রুত শেষ করা, ডাক্ট সার্ভিস তৈরি, রোড ক্রসিং ও পয়েন্ট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ঢাকার দুই সিটির লোগো

এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দরকারি হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা না করে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগের ক্যাবল না কাটতে ডিএনসিসির মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আইএসপি ও এনটিটিএনগুলোর সঙ্গে কথা বলে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন। সবার সঙ্গে বসে এর কার্যকর সমাধান করা দরকার, দেখি কী হয়।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে এ বিষয়ে ডিও লেটার দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ১৮ অক্টোবর থেকে সংগঠন দুটির কর্মসূচি শুরু হলে ভালো কিছু হবে না।

গতরাত পর্যন্ত এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি উল্লেখ করে আএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, এ কারণে আমরা সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। মৌখিকভাবে আন্দোলনে না যেতে বলা হলেও আমাদের আর কোনো উপায় নেই।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন কোয়াবের সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ। তিনি বলেন, করোনাকালেও সেবা অব্যাহত রাখতে কর্মীরা দিনরাত কাজ করেছে। ক্যাবল কাটা শুরু হলে তাদের পরিশ্রম আরো বেড়ে গেছে। পুনরায় সংযোগ দিতে দিতে তারা এখন ক্লান্ত, বেতন-ভাতা নিয়েও সমস্যা বাড়ছে।