এ বছর আর খুলছে না বিদ্যালয়!

প্রাণঘাতী করোনার ধাক্কা এখনো থামেনি, তার ওপর নতুন করে আসন্ন শীত মৌসুমে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ বছর আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলছে না, শিক্ষার্থীদেরও শ্রেণিকক্ষে বসা হচ্ছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ঘটতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পাঠদান বন্ধ থাকায় ফাঁকাই থাকছে শ্রেণিকক্ষ!

শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা -ফাইল ছবি

মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। বিষয়টি জানিয়ে আজ বুধবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩০ কর্মদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আওতায় চারটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দিবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার উত্তর মূল্যায়ন করে তাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরবর্তী বছরে তা দূর করা হবে।

এটি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে তোলার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া এবং তার উত্তরপত্র জমা দেয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে অনলাইনে। তবে স্বাস্থবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিদ্যালয়ে গিয়েও উত্তর জমা দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষা কার্যক্রম এভাবেই চলবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। ফলে এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় কেটে যাবে চলতি বছরের বাকি দিনগুলো। এতে বছরান্তে কার্যত পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে তারা।

এদিকে, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩১ অক্টোবর। কিন্তু এরই মধ্যে আজ শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী মাস অর্থাৎ নভেম্বরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। আসন্ন শীত মৌসুম সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন। অনেকে তা না মানায় ঝুঁকিটা থেকেই যাচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়

তবে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে, সেটি স্পষ্ট করে জানাননি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেছেন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যতটুকু ঝুঁকি নিতে পারবেন, সে রকম অবস্থায় পৌঁছানো গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর আজকের বক্তব্যে অনেকটাই স্পষ্ট যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও হয়তো এ বছর আর খুলছে না। কেননা, শীত কড়া নাড়ায় ঠাণ্ডাজনিত কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঝুঁকি নিতে চাইছে না সরকার। এ জন্যই একবারে না দিয়ে গত কয়েক মাসের মতো ধাপে ধাপে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে নভেম্বরের শেষ দিকে হয়তো ছুটি আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হবে, তাতেই বছর শেষ।

করোনার কারণে এরই মধ্যে এবারের পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও বাতিল করে অষ্টমের সমাপনী ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ফলাফল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরের শুরুতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হলেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষা ছাড়াই বার্ষিক শিক্ষা কার্যক্রমের শেষ হতে যাচ্ছে।