ইউরোপকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

প্রাণঘাতী করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, বিশ্ব অর্থনীতিও টালমাটাল। নতুন এ মহামারি মোকাবেলায় উন্নত ও অনুন্নত সকল দেশই হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতির প্রশংসা উঠে এসেছে বিশ্ব গণমধ্যমে। বলা হচ্ছে, প্রথম দফার করোনা সংক্রমণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পদক্ষেপে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা। এখন দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে আসন্ন শীত মৌসুমে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে তৈরি একটি পোশাকের ব্র্যান্ড, ছবি- দ্য পার্লামেন্ট

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও পুনর্গঠন নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কর্মসংস্থান ও সমাজ বিষয়ক কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান টমাস জেকোভস্কি। গত ২৭ অক্টোবর প্রভাবশালী ‘দ্য পার্লামেন্ট’ ম্যাগাজিনে সেটি প্রকাশ।

এ নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর অর্থনীতি পুনর্গঠনে ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ৩৯০ বিলিয়নই হচ্ছে অনুদান। এর বাইরে থাকা দেশগুলোর ক্ষেত্রেও ছোট অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেও পুঁজির সর্বোচ্চ সংস্থান করতে হয়েছে।

বাংলাদেশের পোশাক খাত

এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো বৃহৎ বাজার থাকলেও প্রয়োজনীয় অর্থ ধার নিতে অক্ষম হচ্ছে। এতে নাগরিকদের জন্য স্থায়ী উদ্ধার কর্মসূচি নিতে না পারায় জনজীবনে প্রভাব পড়ছে। এমনই একটি দেশের নাম বাংলাদেশ, যারা ‘সামান্য উন্নত দেশগুলোর’ একটি হবার চেয়েও বেশি কিছু করছে।

বাংলাদেশে বেশিরভাগই সফল উন্নয়নের গল্প উল্লেখ করে প্রবন্ধটিতে বলা হয়, ৫০ বছরের মধ্যেই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও গণতন্ত্র সুসংহতকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অস্ত্র ছাড়া ইইউ ও বাংলাদেশের সব ধরনের বাণিজ্য উন্মুক্ত করাকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পোশাক শিল্পকে উল্লেখ করে বলা হয়, এ শিল্পে ৪৫ লাখ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে, যারা রপ্তানির ৮০ ভাগ যোগান দিচ্ছে। এ খাতের কারণে ইউইর বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদারের অন্যতম হচ্ছে ঢাকা।

পোশাক শিল্পে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এ খাত। গত সাত বছরে এ খাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, যার মধ্যে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির আইন করা, কারখানার নিরাপত্তা উন্নত করা, কাপড় নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার মতো বিষয় রয়েছে।

তবে একক শিল্পের ওপর কোনো দেশের নির্ভরশীলতা যে বোঝা হতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছে করোনার মহামারি। এর কারণে চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার বাতিল করছে। দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদাররা মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় এ খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এমন তীব্র সংকটের সময় পশ্চিমা ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার পক্ষে মত দিয়ে বলা হয়, তা না হলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের হাজার হাজার শ্রমিক বিনা বেতনে বাড়ি ফেরার ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু কাজের পারিশ্রমিক পাওয়া তাদের অধিকার।

এ ক্ষেত্রে ইউইর সংস্থাসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ফোর্স ম্যাজিউর’ ধারা চালু করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে ইউইর ব্যবসায়িক নীতির খারাপ চিত্র ফুটে উঠছে, ঝুঁকিতে পড়ছে পুরো সরবরাহ ব্যবস্থা। এ কারণে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বদলে চুক্তি মেনে চলা এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা উচিত।

বাংলাদেশের জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ায় ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে চলছে কি না, তা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা বাড়াতে ইইউর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়, ভোক্তা, বিনিয়োগকারী, সংস্থা ও দুর্বল শ্রমিকদের সুরক্ষায় স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন। এ জন্য বাংলাদেশি কর্মীদের ত্যাগ না করে ন্যায্য শর্তে তাদের নির্ভরতা নিশ্চিত করার প্রতি সংহতি দেখানোর আহ্বান জানিয়ে নিবন্ধটি সমাপ্ত করা হয়।