হেরে যাওয়ার দিনটি যেভাবে কাটিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর দিনই নিজের জয়ের দাবী প্রচার করে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ তখনও ভোট গণনা অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। ট্রাম্পের দাবি ভুল প্রমাণিত হয়ে গেছে। সাত নভেম্বর ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে বিপুল ব্যবধানে হেরে গেছেন ট্রাম্প। হেরে যাওয়ার দিনটি তিনি কিভাবে কাটিয়েছেন, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন বিবিসির হোয়াইটহাউজ প্রতিবেদক তারা ম্যাককেলভে।
ম্যাককেলভে দাবি করেছেন, ট্রাম্পের অনেক সুদিনে তিনি তার পাশে ছিলেন। দুর্দিনেও ট্রাম্পকে খুব কাছে দেখার অভিজ্ঞতা আছে তার। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার দিনটি একেবারে ভিন্ন রকম ছিলো।
সাত নভেম্বর সকাল সকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব ছিলেন ট্রাম্প। দিনের প্রথম ভাগটা তিনি নির্বাচনে বিভিন্ন রকম কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ করে কাটান। যদিও তার কোনো অভিযোগের ভিত্তি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এরপর সকাল দশটা বাজার কিছুক্ষণ আগে কালো উইন্ডব্রেকার, কালো ট্রাউজার ও একটি সাদা ক্যাপ পরে তিনি বেরিয়ে পড়েন তার গলফ ক্লাবের উদ্দেশ্যে। ট্রাম্পের ক্যাপে লেখা ছিলো— ম্যাক আমেরিকা গ্রেট এগেইন— গত নির্বাচনের আগে এটা ছিলো তার প্রচারণার মূল কথা।
গলফ ক্লাবের উদ্দেশ্যে হোয়াইটহাউজ থেকে বের হওয়ার সময় ট্রাম্পকে বেশ ফুরফুরে মনে হয়েছে। দৃশ্যত ফুরফুরে মেজাজেই কালো একটি গাড়িতে করে হোয়াইটহাউজ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের গলফ ক্লাবে চলে যান ট্রাম্প।
ট্রাম্পকে ফুরফুরে লাগলেও তার সাথে গত চার বছর ধরে কাজ করে আসা লোকজনকে খুব একটা স্বস্তিতে আছেন বলে মনে হয়নি ম্যাককেলভের। ট্রাম্পের সাথে কাজ করা একজন জুনিয়র কর্মীকে তিনি কুশল জিজ্ঞেস করলে ওই কর্মী বিরস মুখে উত্তর দেন— এই তো ভালো; এইটুকু বলে নিজের ফোনের স্ক্রিনে মনোযোগ দেন তিনি।
হোয়াইটহাউজ যেনো মৃত্যুপুরী!
ম্যাককেলভে লিখেছেন, শনিবার সকালে হোয়াইটহাউজে গিয়ে তিনি একেবারে অন্য রকম অবস্থা দেখতে পান। নির্বাচনে ট্রাম্পের ভরাডুবি নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানে বিরাজ করছে এক ধরনের বিষাদ। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার, অথচ হোয়াইটহাউজে যেনো বেদনার ঝড় চলছে বহুকাল ধরে; অন্তত শনিবার সকালে ম্যাককেলভের কাছে পরিস্থিতি এমনই মনে হয়েছে।
হোয়াইটহাউজের ওয়েস্ট উইংয়ের বেশির ভাগ ডেস্কই ফাঁকা পড়ে ছিলো। অবশ্য এর কারণ হলো করোনাভাইরাস— সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এবং বাকিরা কোয়ারিন্টিনে আছেন।
সকাল সাড়ে এগারটার দিকে ট্রাম্পের পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, এপি, গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের বড় বড় মিডিয়া জানাতে থাকে যে, জো বাইডেনের কাছে বিপুল ব্যবধানে হেরে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইটহাউজ প্রেস পুলের সদস্য হওয়ায় ম্যাককেলভে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে ভ্রমণের সুযোগ পান। এই সুযোগ নিয়েই তিনি গলফ ক্লাবের দিকে যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করতে থাকেন।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ধারণার চেয়েও গলফ ক্লাবে বেশি সময় কাটাতে থাকেন। তার সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধুরা। আর গেটের বাইরে ছিলেন তার অনেক সমর্থক। যদিও গলফ ক্লাব যে জায়গায় অবস্থিত, সেই এলাকাটি ডেমোক্র্যাটদের এলাকা বলে বিখ্যাত।
তারপরও ট্রাম্পের বেশ কিছু সমর্থক সেখানে জমায়েত হয়েছিলেন। তারা ট্রাম্পের পক্ষে এবং মিডিয়ার বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ চিৎকার করে মিডিয়াকে গালাগালও করছিলেন।
এর মধ্যেই ট্রাম্পের একজন সমর্থক একটি ছোট ট্রাক নিয়ে গলফ ক্লাবের সামনে আসেন। ওই ট্রাকে উড়ানো হচ্ছিলো বেশ কয়েকটি পতাকা। ছিলো একটি ছবিও— ট্রাম্প একটি ট্র্যাঙ্কের উপর দাঁড়িয়ে আছেন— যেনো তিনি সারা পৃথিবীর কমান্ডার।
ম্যাককেলভে লিখেছেন, গত চার বছর আসলে ট্রাম্পের সমর্থকরা তাকে এভাবেই দেখেছেন, এবং ট্রাম্প নিজেও তাকে সারা দুনিয়ার নেতা হিসেবেই দেখতেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তার এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ট্রাম্প বেরিয়ে আসেন, এবং হোয়াইটহাউজের দিকে যাত্রা করেন।
“ট্রাম্প, তুমি হেরেছো, আমরা সবাই জিতে গেছি”
ট্রাম্প তার গাড়িবহর নিয়ে হোয়াইটহাউজের দিকে যাত্রা করেন, এবং তার কাছাকাছি একটি গাড়িতে করে হোয়াইটহাউজের দিকে ফিরতে থাকেন ম্যাককেলভে এবং অন্যান্য সংবাদকর্মীরাও।
যাত্রাপথে লোকজনকে ট্রাম্পের বিদায়ে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর মধ্যে একজন একটি সাইন দেখান, সেখানে লেখা ছিলো: “ট্রাম্প, তুমি হেরেছো, আমরা সবাই জিতে গেছি।”
হোয়াইটহাউজে পৌঁছার পর সাধারণত ব্যবহার করেন না এমন একটি গেট দিয়ে ভেতরে চলে যান তিনি। এ সময় তার মাথা ছিলো নিচু, এবং তার কাঁধ ছিলো ঝুলে পড়ার মতো।
ভেতরে ঢোকার সময় তিনি একবার সাংবাদিকদের দিকে তাকান এবং থাম্বস আপ দেখান। ট্রাম্প গত চার বছরে ঠিক এভাবে সাংবাদিকদের এভাবে খুব একটা থাম্বস আপ দেখাননি। তিনি সাধারণত যেভাবে হাত উঁচু করেন, সেভাবে তাকে এদিন দেখা যায়নি; লিখেছেন ম্যাককেলভে।
টুইটারে ট্রাম্পকে যেভাবে দম্ভভরে নিজের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়, নির্বাচনে হার নিশ্চিত হওয়ার দিন তার সেই সদম্ভ ভাবটা আর দেখা যায়নি। বরং তাকে মনে হয়েছে এক পরাজিত সেনাপতি। জো বাইডেনের কাছে হারের পর ট্রাম্পের সদর্পে চলাফেরা করার ভাবটা একেবারে উধাও হয়ে গিয়েছে বলেই মনে হয়েছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.