যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি
- Details
- by অরণ্য সৈকত
সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। অন্যদিকে, হারের পর হোয়াইট হাউস থেকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটির ক্ষমতার এ পালাবদল বাংলাদেশে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে ঢাকায় চলছে নানা ধরনের বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
অবশ্য নির্বাচনের আগে থেকেই এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিন্টে হিসেবে বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছে, অন্যান্য মহলের নজরও নিবিষ্ট থাকতে দেখা যাচ্ছে। দৃশ্যমান কোনো প্রভাব দেখা না যাওয়া পর্যন্ত এই ধারা চলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাইডেনের জয় বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে অতীতের চেয়ে আরো ইতিবাচক হবে বলে মনে করে সরকার। বিশেষ করে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নে বাইডেনের প্রতিশ্রুতি পূরণ হলে পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) বাইডেন প্রশাসন পুনর্বহাল করুক বা না করুক, ব্যবসা-বাণিজ্যের আরো কিছু ক্ষেত্র প্রসারিত হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও ঢাকার প্রতি মার্কিন নৈতিক সমর্থন আরো জোরালো হবে।
ডেমোক্র্যাটদের কিছু কিছু নীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিবাচক হবে উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও মানবাধিকারসহ নানা ইস্যুতে বাইডেনের অবস্থান বেশ বলিষ্ঠ, যা থেকে উপকৃত হবে ঢাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে জো বাইডেন এবং তারও ডানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন- ফাইল ছবি
এ ছাড়া বাইডেনকে অভিবাসন-বান্ধব হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার সরাসরি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ- এমনটাই মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অবশ্য মার্কিন অভিবাসনপ্রত্যাশীরাও বলছেন, উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত বাইডেনের নীতি দেশটিতে বাংলাদেশিদের প্রবেশ ও বসবাসে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
অবশ্য বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না ঢাকার সাবেক দু’জন কূটনীতিক। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলছেন, ক্ষমতায় যে-ই আসুক, মার্কিন বিদেশনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন অতীতে দেখা যায়নি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
তবে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধা পেলেও পেতে পারে উল্লেখ করে তারা বলেন, দুই দশক আগের চেয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূণ হয়ে উঠছে, অর্থনীতির আকার ও কর্মকাণ্ড বেড়েছে। সেটি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অবস্থানে এখনো পৌঁছায়নি।
কোনো কোনো কূটনীতিক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি কয়েকটি ইস্যুর ওপর নির্ভর করে, যার মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার, মানব পাচার ও গণতন্ত্রের মতো বিষয়। এসব ইস্যু বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ঠিক করে, অন্যান্য দেশের সঙ্গে ঢাকার বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রথাগত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বাইডেন ফিরে গেলে বা দেশটির নীতি অপরিবর্তিত থাকলেও বাংলাদেশের কোনো ‘অসুবিধা নেই’ বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছুতেই ভালো-মন্দ আছে। বাইডেনের বেলায়ও প্লাস-মাইনাস দুটোই আছে।
বিএনপির পতাকা
এদিকে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল রোববার একটি বার্তা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর। তাতে জো বাইডেন তার দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সেইসঙ্গে বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জোরালো ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করেন এ বিএনপি নেতা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয় অভিনন্দনবার্তায়। আশা প্রকাশ করা হয়, গভীর সম্পর্কের সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন জো বাইডেন।
নির্বাচনের আগে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগ। তাতে বলা হয়, মার্কিন সরকার বদল হলেও দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যায় না। তবে এবারের বিষয়টি ভিন্নতর হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নতুন সরকারের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে বাইডেন ক্ষমতায় এলে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হকের মত, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে চীন-ভারত সমীকরণে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে। ট্রাম্প ক্ষমতায় টিকে গেলে মুসলিম বিশ্বে সমীকরণে পরিবর্তন আনতে পারেন, তা হলে বাংলাদেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও ওই সময় বলা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন -ফাইল ছবি
তৈরি পোশাক রপ্তানির বিষয়ে ঢাকার উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাট সরকার ক্ষমতায় এলে এ খাতে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে। তবে দলটির রাজনীতি ও পররাষ্ট্র নীতিতে হিলারি ক্লিন্টনের বড় প্রভাব রয়েছে, যা বাইডেনের নীতিতেও প্রতিফলিত হবে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ভারতের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনীতি চালিয়ে আসছিল, যাতে এবার পরিবর্তন আসছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের খারাপ সম্পর্ক এবং মোদি সরকারের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, ভালো চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্যই বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে ওয়াশিংটন।
দুই দেশের সম্পর্কের মূলে অর্থনীতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার মতো মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এটি অব্যাহত থাকলে মার্কিন নতুন সরকারের কাছে ঢাকার গুরুত্ব আরো বাড়বে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাবের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ মার্কিন নির্বাচনের আগে বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকলে এখনকার অবস্থাই চলতে থাকবে। বাইডেন আসলেও বহির্বিশ্ব নিয়ে ভাবার খুব একটা সময় থাকবে না। কারণ, ট্রাম্পের কারণে মার্কিন অর্থনীতি ও ভাবমূর্তির ক্ষতি কাটাতেই তাকে ব্যস্ত থাকতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। এ ক্ষেত্রে করোনার টিকা, শিক্ষার্থী ভিসা, বৈধ অভিবাসন, জিএসপি সুবিধা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের কথা উল্লেখ করা যায়।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.