ব্যবসা ও সন্তান আগলে রাখতে মায়ের ‘অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’

দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ আবদুল মোনেম লিমিটেডের মালিক আবদুল মোনেম গত ৩১ মে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে দুই সন্তানের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এমতাবস্থায় ব্যবসায়িক ও ছেলেদের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে ব্যবসার হাল ধরেছেন মা মেহেরুন্নেসা।

আবদুল মোনেম ও তার ব্যকসায়িক গ্রুপ

বলা হচ্ছে, আবদুল মোনেমের মৃত্যুর পর গ্রুপের ব্যবসা ভাগাভাগি নিয়ে তার দুই সন্তানের মধ্যে বিবাদ দেখা দিলে পরিবার ও সন্তানদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে অন্দরমহল থেকে প্রকাশ্যে আসেন মেহেরুন্নেসা। দায়িত্ব নেন গ্রুপটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের।

জীবিত অবস্থায় আবদুল মোনেম এক হাতে ব্যবসা পরিচালনা করলেও কখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি মেহেরুন্নেসাকে। প্রতিষ্ঠানের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করে না যাওয়ায় তার মৃত্যুর পর দুই ছেলের মধ্যে এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।

জানা গেছে, আবদুল মোনেমের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলের নাম মাঈনুদ্দিন মোনেম, ছোট ছেলে মহিউদ্দিন মোনেম। তারা দুজন আগে থেকেই পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছেন। তিন মেয়ের মধ্যে একজন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত খাতলেও বাকি দুজন দেশের বাইরে থাকেন।

আবদুল মোনেমের দুই ছেলে

বণিক বার্তার খবরে বলা হয়, দুই ভাইয়ের বিরোধের জেরে সম্প্রতি একটি ব্যাংকে গ্রুপের লেনদেন ব্যাহত হয়। এ কারণেই হাল ধরতে হয়েছে মা মেহেরুন্নেসাকে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মেহেরুন্নেসাকে চেয়ারম্যান ও এমডি করা হয়েছে। এ দুই পদে আবদুল মোনেমের সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন তিনি। কেবল এ বিষয়টি চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে গ্রুপের ম্যানেজার (লিগ্যাল) জহিরুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর গত ৭ জুনের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের রেজল্যুশন চূড়ান্ত হয়। আরো ১০-২০ দিন লেগে যায় আরজেএসসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করার মৌখিক অনুরোধ জানিয়েছিল। পরবর্তীতে তা সম্পন্ন করে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়।

এর আগে দেশের একাধিক ব্যবসায়িক গ্রুপের কর্ণধারের মৃত্যুর পর সন্তানদের মধ্যে ব্যবসা বা সম্পদ ভাগের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা আদালতেও গড়িয়েছে। এ ধরনের তিক্ততা এড়াতে মেহেরুন্নেসার ভূমিকা ব্যবসায়িক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদক নিচ্ছেন আবদুল মোনেম

প্রতিবেশী ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ রিলায়েন্সের মালিক ধীরু ভাই আম্বানির মৃত্যুর পর তার দুই ছেলের মধ্যেও সংটক দেখা দিয়েছিল। মুকেশ ও অনিল আম্বানির মধ্যে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান ভাগাভাগি করে দেন তাদের মা। কিন্তু মেহেরুন্নেসা তার দুই ছেলের মধ্যে ব্যবসা ভাগ করে দেননি, ঐক্য ধরে রাখতে শক্ত হাতে হাল ধরেন।

জানা যায়, আবদুল মোনেম ১৯৫৬ সালে নির্মাণ খাতে ব্যবসা শুরু করেন, যখন তার পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। এএমএল কন্সট্রাকশন দিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিই আজকের আবদুল মোনেম লিমিটেড।