যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর, আমৃত্যু নয়

যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড, আমৃত্যু নয় বলে রায় দিয়েছেন আদালত। তবে রায়ে যদি আমৃত্যু কারাদণ্ড লেখা থাকে, সেক্ষেত্রে আসামিকে আমৃত্যু সাজা ভোগ করতে হবে। ২০১৭ সালে সাভারের ব্যবসায়ী জামান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা পরিবর্তন করে দেওয়া রায় নিয়ে হওয়া রিভিউ আবেদনের চূড়ান্ত রায়ে আজ মঙ্গলবার এ কথা বলেন আদালত।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

ওই রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে আপিল বিভাগ বলেছিল যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর নয়, আমৃত্যু কারাবাস।

পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে একটা ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয় এবং এ বিষয়ে একটি রিভিউ আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের চূড়ান্ত রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ৩০ বছরের কারাদণ্ড। তবে রায়ে যদি আমৃত্যু কারাদণ্ড লেখা থাকে, সেক্ষেত্রে আসামিকে আমৃত্যু সাজা ভোগ করতে হবে।

রিভিউ আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আপিল বিভাগ শর্ট অর্ডারে বলেছেন, বাংলাদেশের দণ্ডবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজার অর্থ হবে ৩০ বছর কারাদণ্ড। তবে কোনো নির্দিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনাল যদি কোনো ব্যক্তিকে আমৃত্যু কারাগারের আদেশ দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির জন্য কোনো রেয়াত বা বেনিফিট প্রযোজ্য হবে না। তাকে আমৃত্যুই কারাভোগ করতে হবে। তবে সাধারণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ হবে ৩০ বছর।’

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল, তার প্রাথমিক সমাধান হলো যে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিষয়টি ৩০ বছর ধরেই হিসাব করতে হবে। তবে আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিষয়টি কারাগারে কীভাবে মেনটেইন করা হবে- তা নিয়ে সরকার পরবর্তীতে নির্দেশনা দিতে পারে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে আপিল বিভাগ জামান হত্যা মামলার আসামিদের সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে রায়ে আমৃত্যু কারাবাসের কথা বলা ছিল। যা নিয়ে পরবর্তীতে আইনজীবীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। কারণ এর আগে বাংলাদেশ সরকারের একটি সার্কুলারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত বলে উল্লেখ করা হয়।

এমনই প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ব্যবসায়ী জামান হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আইনজীবীরা একটি রিভিউ আবেদন করেন।

উল্লেখ্য, সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে ২০০১ সালে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০৩ সালে নিম্ন আদালত কামরুল, আতাউর ও আনোয়ার নামের তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আতাউর ও আনোয়ার হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন।

পরে ২০০৭ সালে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয় হাইকোর্ট। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আসামি পক্ষ।

ওই আপিলের ওপর শুনানি শেষে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। সেইসঙ্গে যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।