সমাধানের পথে সৌদি-কাতার সংকট!

পারস্য উপসাগরীয় ছোট্ট প্রতিবেশী কাতারের ওপর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন চার দেশের চাপিয়ে দেয়া সর্বাত্মক অবরোধের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই পদক্ষেপ পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ায় দোহার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তি করছে রিয়াদ।

বামে- সৌদি বাদশাহ সালমান, ডানে- কাতারের আমির শেখ তামিম

মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাত দিয়ে আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, চলমান বিরোধ নিষ্পত্তির প্রাথমিক এক চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে কাতার ও সৌদি আরব। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাই জারেড কুশনার দেশ দুটি সফর করার পর এমন খবর এলো।

বলা হচ্ছে, উপসাগরীয় অঞ্চলের (বিশেষত কাতার) দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা নিয়ে কুশনার সৌদি ও কাতার সফর করেন। তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দেশ দুটি চুক্তিতে আসতে সম্মত হয়েছে। সম্ভাব্য নতুন এ চুক্তিতে থাকছে- সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশসীমা কাতারের জন্য ফের উন্মুক্ত করে দেয়া। তবে এ চুক্তিতে আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর থাকছে না।

সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদের সঙ্গে রিয়াদে বৈঠক করার পর গত বুধবার দোহায় কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কুশনার। অন্য তিন দেশের নেতাদের সঙ্গে এখনো তার কোনো বৈঠক হয়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কুশনার

এর আগে গত ২১ নভেম্বর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেছিলেন, কাতারের সঙ্গে চলমান বিরোধের অবসান ঘটাতে সমাধানের উপযুক্ত উপায় খোঁজা হচ্ছে। তবে আইনসঙ্গত উদ্বেগের শর্তাধীন বিষয়টি সমাধান হওয়া জরুরি। তা হলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা অঞ্চলের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবে।

তারও সপ্তাহখানেক আগে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ জিততে পারবে না। আমরা আশা করি, যেকোনো সময় বিদ্যমান অবস্থার অবসান ঘটবে।

দুই মাস আগে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সালের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তখন তিনি জানান, কাতার অবরোধ অবসানের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, খুব দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে।

এদিকে, খুব শিগগিরই কাতার অবরোধের সমাধান আসবে না বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা। তিনি ইসরায়েলি গণমাধ্যমকে বলেন, এটি সমাধান খুব সহজ নয়, রাতারাতি কিছু হবেও না।

ডানে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, বামে কাতারের আমির শেখ তামিম

সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ অ্যালেনা ডুহান বলেন, কাতারের সঙ্গে সৌদি জোটের অবরোধের মূলে সন্ত্রাসবাদ নয়, আঞ্চলিক ঝামেলা। এভাবে একটি দেশের সাধারণ মানুষের মানবাধিকার হরণ করে সরকারকে শিক্ষা দেয়ার নীতি কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে এটি প্রত্যাহার করা জরুরি।

২০১৭ সালের জুনে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন। এরপর ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক কমানো, মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন না দেয়া ও আলজাজিরা বন্ধসহ বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয় চার দেশ।

অবরোধের শুরু থেকেই সৌদি জোটের সব অভিযোগ অস্বীকার করে তা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ আনে কাতার। দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি জানান, চলমান সংকট নিরসনে আলোচনায় বসতে তার দেশ প্রস্তুত রয়েছে। তবে চাপিয়ে দেয়া শর্তে নয়, তা হতে হবে কাতারের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানিয়ে।

সম্ভাব্য সব কিছু দিয়ে কাতারের পাশে দাঁড়িয়ে সৌদি অবরোধ ব্যর্থ করে দেয় তুরস্ক ও ইরান। এরপর দেশ দুটিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করে দোহা।