নতুন কৌশলে মুদ্রাবাজারের ‘দখল’ নিতে চায় চীন

দেশ তো বটেই, বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারের দখল বা নিয়ন্ত্রণ নিতে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ চীন। এ লক্ষ্যে দেশটি তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল কারেন্সির ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে। যা ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আলাদা।

বিশ্ব মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চীনের নতুন কৌশল ডিজিটাল কারেন্সি

জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই ডিজিটাল মুদ্রার পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরুও করেছে বেইজিং। এই মুদ্রা জনপ্রিয়করণের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অলিম্পিক-২০২২ কে কাজে লাগাতে চাচ্ছে দেশটি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ভবিষ্যতে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের আধিপত্য কমাতে সাহায্য করবে চীনের ডিজিটাল কারেন্সি।

চীনের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ১৮ ডিসেম্বর থেকে দেশটির সুঝোউ প্রদেশে পরীক্ষামূলক হিসেবে এই মুদ্রা ব্যবহারের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এই ডিজিটাল কারেন্সি প্রায় ১ হাজার মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

বিশ্ব মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চীনের নতুন কৌশল ডিজিটাল কারেন্সি

এই মুদ্রার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- শুধু স্মার্টফোন প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি লেনদেন করা যাবে। যার জন্য কোনো ইন্টারনেট সংযোগেরও প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ অর্থ লেনদেনের প্রচলিত ধারণার আধুনিকায়ন করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে চীন।

এশিয়া টাইমস-সহ অন্যান্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহারের ফিচারসহ স্মার্টফোন তৈরি করেছে। চীন সরকারের এই প্রকল্পের সঙ্গে জেডি ডটকম নামে একটি প্রতিষ্ঠানও জড়িত আছে। ফলে চীনা নাগরিকরা চাইলে জেডি ডটকম থেকেও ডিজিটাল মুদ্রা দিয়ে কেনাকাটা করতে পারবেন।

পিপলস ব্যাংক অব চায়না সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারের চিন্তা শুরু করে চীন। কিন্তু সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর এই ডিজিটাল কারেন্সির প্রভাব নিয়ে চিন্তিত ছিল আলীএক্সপ্রেস ও উইচ্যাট পে’র মতো টেক জায়ান্টগুলো। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে তারা বিগত ৫ বছর ধরে নানা গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে। এর পরই আধুনিক এই লেনদেনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু চীন।

চীনের এই ডিজিটাল কারেন্সির ইলেকট্রনিক পেমেন্টের (ডিসি/ইপি) সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে আরেক ডিজিটাল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির। এই দুয়ের মধ্যে মূল হলো- চীনের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর প্রতিটি স্তর নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি করবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া চীনের ডিজিটাল মুদ্রার নজরদারি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে হওয়ায় কাজটি করা সহজ। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে অর্থের যোগান ও লেনদেনসহ অন্যান্য কার্যক্রম কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে না। ফলে নজরদারিতে আনাও অসম্ভব।

বলা হচ্ছে, চীনের নাগরিকদের মধ্যে যারা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত নয়, এই ডিজিটাল কারেন্সির লেনদেনের সঙ্গে তাদেরকেও সম্পৃক্ত করা হবে। চীনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করা গেলে তা মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা ইওয়ানকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।

তবে চীনের এই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করছে দেশটির জনগণের ওপর। কারণ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে স্থানীয়দেরই আগে এই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।